লম্বা-হওয়ার-সহজ-এবং-প্রাকৃতিক-উপায়-How-To-Become-Taller-Bangla-Health-Tips

লম্বা হওয়ার প্রাকৃতিক উপায়
গুলো কি আসলেই কোন কাজে আসে? অনেকের মনেই এই ধরনের প্রশ্ন উঁকি দিয়ে থাকে। একটা বয়সে এসে আপনার সমবয়সী সকলেই আপনার চেয়ে লম্বা হয়ে গেছে অথচ আপনি পরে আছেন সেই আগের উচ্চতায়। কম উচ্চতার কারনে হীনমন্যতায় ভুগছেন সাথে একটু একটু করে আত্মবিশ্বাসও হারিয়ে ফেলছেন। বয়সন্ধিকালে এমন ঘটনা নেহাতই কম নয়।

তবে উচ্চতা না বাড়ার পিছনে কিন্তু আপনার কোন হাত নেই। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার জেনেটিক, খাদ্যাভ্যাস এবং পরিবেশের উপর। সাধারণত নারী এবং পুরুষ একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত লম্বা হয়। পুরুষেরা ২০ বছর পর্যন্ত এবং নারীর ক্ষেত্রে সেটা ১৮ বছর পর্যন্ত। এরপর অবশ্য তেমন একটা উচ্চতা বৃদ্ধি পায় না। তবে কিছু প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করে আপনি আপনার উচ্চতা কিছুটা হলেও বাড়াতে পারেন। চলুন জেনে নেই সেই উপায় গুলো কি কি.....

 


সহজে লম্বা হওয়ার প্রাকৃতিক উপায়

একটি সন্তান লম্বা অথবা খাট হওয়ার পেছনে মা-বাবার DNA এর ভূমিকাসবচাইতে বেশি। এরপর পুষ্টিকর খাদ্য এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ আপনার উচ্চতা বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে। যেমন পশ্চিমা দেশগুলো শীতপ্রধান হওয়ায় তাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষই অনেক লম্বা। সেইক্ষেত্রে গরমপ্রধান দেশগুলোতে মানুষজন তুলনামূলক কম উচ্চতার হয়ে থাকে।

তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়াম আপনার উচ্চতা বাড়াতে অনেকাংশেই সাহায্য করে। প্রাকৃতিক উপায়ে কাঙ্খিত ফলাফল পেতে আপনার কিছুটা সময় বেশি লাগতে পারে। কিন্তু দ্রুত উচ্চতা বাড়াতে গিয়ে লম্বা হওয়ার ইনজেকশন গ্রহণ করতে যাবেন না। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং হুমকিস্বরূপ।

আজকে আপনাদের এমন ১০ টি প্রাকৃতিক উপায়ের কথা বলব যা মেনে চললে সহজেই আপনার উচ্চতা কয়েক ইঞ্চি পর্যন্ত বাড়াতে পারবেন।

১. সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন

লম্বা হওয়ার উপায় নিয়ে বলতে গেলে সবার প্রথমে বলতে হয় সঠিক খাদ্যাভ্যাসের কথা। আপনার যতটুকু ক্যালরি প্রয়োজন ততটুকু যদি গ্রহণ না করেন তাহলে সঠিকভাবে আপনার শারীরিক বিকাশ ঘটবে না। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখুন। প্রতিদিন মাছ, মাংস, মৌসুমী ফল, শস্যদানা, বাদাম, দুধ, সয়াবিন, ডিম, সবুজ শাকসবজি, এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। এছাড়া জিঙ্ক এবং মিনারেলস আপনার উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন এবং জিংক যুক্ত খাবার যেমন পালং শাক, গমের তৈরি আটা, মিষ্টি কুমড়া, চিনা বাদাম প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন। ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয়, চিনি এবং চর্বিযুক্ত খাবার সম্পূর্ণরূপে পরিহার করুন।

২. প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম গ্রহণ করুন

আমরা জানি শরীরের হাড় গঠনে ক্যালসিয়াম কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ছোটবেলা থেকেই আমাদের হাড় মজবুত করতে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা উচিতযদি আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের কোনো ঘাটতি থেকে থাকে তবে বাড়তি ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট আপনি খেতে পারেন। তবে তার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিবেন। আপনার হাড় মজবুত হলে স্বাভাবিকভাবে আপনার উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে

৩. র্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম

আমাদের শারীরিক বিকাশের সিংহভাগই ঘুমের সময় হয়ে থাকে। পরিমিত ঘুমের ঘাটতি আমাদের উচ্চতা বৃদ্ধিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ঘুমের সময় আমাদের দেহ বিকাশের হরমোন (HGH) উৎপাদন করে থাকে। এই হরমোন আমাদের শরীরের হাড় এবং পেশী বিকাশ করতে এবং লম্বা হতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে দিনের বেলাতেও ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মত পাওয়ার ন্যাপ নিবেন। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, অতিরিক্ত ঘুমও কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

৪. সাঁতার কাটুন

সাঁতার এমন একটি ব্যায়াম যার মাধ্যমে আপনার শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ একই সময়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে। প্রতিদিন সাঁতার কাটলে হাড় বৃদ্ধি সহ আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে ফেলে। বিভিন্ন সমিক্ষায় দেখা গেছে যারা প্রতিদিন একবার হলেও সাঁতার কাটে তাদের লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা বাকিদের থেকে অনেক বেশি থাকে।

৫. ভিটামিন-ডি

ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের হাড় মজবুত করে। সকালবেলার সূর্যের আলোক রশ্মিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। তাই ডাক্তাররা শিশুর জন্মের পর তাকে সকালের কিছুটা সময় সূর্যের আলোক রশ্মিতে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়া ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার যেমন সামুদ্রিক মাছ, দুধ, দুধের তৈরি খাদ্য, ডিমের কুসুম, মাশরুম প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।

৬. লম্বা হতে যোগব্যায়াম করুন

ঘরে বসে যোগব্যায়াম করেও প্রাকৃতিকভাবে আপনি আপনার উচ্চতা বাড়াতে পারেন। যোগব্যায়াম সাধারণত আমাদের শারীরিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নিয়মিত কিছু যোগব্যায়ামের অভ্যাস করুন যেমনঃ স্ট্রেচিং, হ্যাঙ্গিং, মাউন্টেন পোজ, পেলভিক ব্রীজ, কোবরা পোজ, চাইল্ড পোজ, জগিং, ওয়ারির পোজ, ইত্যাদি। টিনেইজ বয়সে আমাদের অনেকের বাবা-মায়েরাই উচ্চতা বাড়ানোর জন্য আমাদের নিয়ম করে রিং-এ ঝুলাতো। এটি ছিলো আমাদের সময়কার সবচেয়ে সহজে লম্বা হওয়ার প্রাকৃতিক উপায়।

৭. খেলাধুলা করুন

খেলাধুলা করলে আমাদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ঘটতে অনেক সুবিধা হয়। সাধারণত খেলাধুলা আমাদের হাড় এবং মাংসপেশি গঠনে অন্যতম ভূমিকা রাখে। শারীরিকভাবে সবসময় আমাদের সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। কিছু খেলাধুলা আপনার লম্বা হওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কাজে দেয়। যেমনঃ দড়ি লাফ, দৌড়, হাই জাম্প, লং জাম্প, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল ইত্যাদি। এছাড়া প্রতিদিন খেলাধুলা করলে আমাদের দেহে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি ঘটে যা আমাদের দৈহিক গঠন লম্বা করে।

৮. দেহের সঠিক অঙ্গবিন্যাস

ইংরেজিতে যাকে বলা হয় Good Posture. বয়সন্ধিকালে আমাদের অনেকের মাঝেই দেখা যায় কুজো হয়ে/ ঝুকে হাটার একটা অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়। অথচ এই কুজো হয়ে হাঁটতে গিয়ে আপনি যে আপনার মেরুদণ্ডকে বাঁকা করে রাখছেন এতে আপনার উচ্চতা বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করছে। তাই ঘাড় এবং মেরুদন্ড সোজা করে হাঁটাচলা করাটা লম্বা হওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এর জন্য ঘরে বসেই মাথার উপর একটি হালকা ভরের কিছু( যেমনঃবই) রেখে সেটা ব্যালেন্স করে হাঁটার অভ্যাস করুন। অল্প কিছুদিন অনুশীলন করলেই দেখবেন আপনার অঙ্গবিন্যাস সঠিক হয়ে এসেছে।

৯. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

অনিয়ন্ত্রিত ওজন যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর তেমন হাড়ের বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেকেই অতিরিক্ত ওজনের কারণে সঠিকভাবে লম্বা হতে পারেন না। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে আমাদের শরীরের হাড়ের উপর চাপ পরে। এতে আমাদের হাড়ের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয় না। তাই লম্বা হতে একটি আদর্শ শারীরিক ওজন বজায় রাখুন।

১০. ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট নিন

যখন দেখবেন লম্বা হওয়ার প্রাকৃতিক উপায় গুলো আপনার জন্য কাজে দিচ্ছে না তখন বুঝতে হবে আপনার বাড়তি সাপ্লিমেন্টের দরকার। তবে এর জন্য আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। অনেক সময় আমাদের শারীরিক কোনো ঘাটতি অথবা হরমোনাল ইমব্যালেন্স এর কারণে স্বাভাবিক উপায়ে উচ্চতা বৃদ্ধি ঘটে না। সেক্ষেত্রে বাড়তি সাপ্লেমেন্ট নিলে তা আপনার উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

পরিশেষ

সাধারণত বয়সন্ধিকাল পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই আমাদের উচ্চতা বেড়ে থাকে। এরপর অবশ্য তেমন একটা উচ্চতার হেরফের হয় না। তবে শারীরিক বিকাশের সময়টাতেই এ ব্যাপার গুলো খেয়াল রাখলে আপনি কিছুটা হলেও উচ্চতা বাড়াতে পারবেন। যেহেতু লম্বা হওয়ার ব্যাপারটা ৬০% থেকে ৮০% নির্ভর করে আমাদের জেনেটিকের উপর। বাকি ৪০% থেকে ২০% কিন্তু আমাদের খাদ্য অভ্যাস এবং পরিবেশের উপর নির্ভর করে

সেক্ষেত্রে লম্বা হওয়ার প্রাকৃতিক উপায় গুলো অনুসরণ করলে আপনি অন্তত ছয় থেকে বারো ইঞ্চিমতো উচ্চতা বাড়াতে পারবেন। একটি সঠিক লাইফ স্টাইল আপনার লম্বা হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি ফলপ্রসু হবে। তাহলে আজ থেকেই শুরু করে দিন লম্বা হওয়ার প্রক্রিয়া এবং আমাদেরকে আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে কিন্তু ভুলবেন না।

Post a Comment

Previous Post Next Post