আকর্ষণীয়
এবং লম্বা গড়নের অধিকারী হতে অনেকেই জানতে চান লম্বা হওয়ার জন্য কি কি খাবার
খাওয়া উচিত। লম্বা হওয়া ব্যাপারটা জেনেটিক্সের উপর নির্ভর করলেও আমাদের দৈনন্দিন
খাদ্য তালিকা এক্ষেত্রে অনেকটাই ভুমিকা রাখে।
খাদ্যতালিকায়
পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি আমাদের সঠিক বিকাশ এবং
উচ্চতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিছু খাবার
দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে আমাদের হাড়ের গঠন এবং মাংসপেশী সুগঠিত করে। যেমন
প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন
ডি যুক্ত খাবার লম্বা হতে সাহায্য করে।
এখানে ১০ টি খাবার রয়েছে যা আপনাকে লম্বা করতে বা আপনার উচ্চতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে। চলুন জেনে নেই .....
লম্বা হওয়ার জন্য কি কি খাবার খাওয়া উচিত
১. প্রাণীজ মাংসঃ
প্রাণীজ মাংসকে প্রোটিনের আধার বলা হয়ে থাকে। যা আমাদের শরীরের মাংসপেশী সুগঠিত
করে টিস্যু গঠনে সহায়তা করে। প্রাণীজ প্রোটিন পেতে মুরগির মাংস খাদ্য তালিকায়
রাখাটা বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। মুরগির মাংসে আছে ভিটামিন বি১২, টাউরিন এবং অ্যামাইনো
এসিড। যা হাড় গঠনে এবং উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। যেহেতু রেড মিট বেশি চর্বিযুক্ত
এবং নানা ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই এটি কম খাওয়াই ভালো। তবে একবারে বাদ
দেওয়াও উচিৎ নয়। কারন রেড মিটেও প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন
থাকে।
২. দুধঃ
দুধে
রয়েছে ক্যালসিয়াম যা হাড় মজবুত করে এর বৃদ্ধি এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করে। সুষম
খাদ্য হিসেবে উচ্চতা বৃদ্ধিতে এর কার্যকারিতা অপরিহার্য। এছাড়া এতে রয়েছে
ভিটামিন এ যা দেহে ক্যালসিয়াম সংরক্ষণ করে থাকে। দুধের প্রোটিন আমাদের দেহের কোষ
তৈরিতে সহায়তা করে। দুধ সহজে হজম হয়ে যায় বলে এটি আমাদের দৈনন্দিন প্রোটিনের
চাহিদা পূরণ করতে পারে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় দুই থেকে তিন গ্লাস দুধ রাখুন।
৩. ডিমঃ
অনেকেই ডিম খেতে
পছন্দ করেননা। তবে আপনাদের জানিয়ে রাখি ডিম কিন্তু প্রোটিনের একটি সেরা উৎস।
ডিমের কুসুমের পুরো অংশ জুড়েই রয়েছে প্রোটিন। তবে এতে ফ্যাটের পরিমাণও বেশি
থাকে। এছাড়াও ডিমে ভিটামিন বি২ থাকে যা রাইবোফ্লাভিন নামেও পরিচিত। লম্বা হওয়ার
জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তত ৩টি থেকে ৬টি ডিম রাখা উচিত।
৪. কলাঃ
কলাতে
প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা আমাদের হাড় মজবুত করে। এছাড়াও এতে রয়েছে
ভিটামিন কে যা আমাদের দৈহিক বিকাশে সহায়তা করে। কলা অনেকেরই পছন্দের ফল বিশেষ করে
বাচ্চাদের। কলাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রনও থাকে এতে রক্তাল্পতা হয়ে আমাদের শারীরিক
গঠনে বাধার সৃষ্টি হতে পারে না।
৫. শিমের বিচিঃ
প্রোটিনযুক্ত
খাবারের তালিকায় শিমের বিচিও রাখতে পারেন। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং
ভিটামিন ডি থাকে। এটি আমাদের দেহে লাল রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করে রক্তাল্পতা থেকে রক্ষা
করতে সাহায্য করে। যদিও আয়রন আমাদের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সরাসরি
সহায়তা করে না কিন্তু এর অভাব আমাদের দৈহিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। শিমের বিচি ফাইবার জাতীয় খাবার এবং এটি ম্যাগনেসিয়াম ম্যাঙ্গানিজ
এবং জিংকের একটি ভালো উৎস। জিংক এবং ম্যাগনেসিয়াম আমাদের উচ্চতা বৃদ্ধিতে অবদান
রাখে।
৬. সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূলঃ
ফলমূল ও শাকসব্জী উচ্চতা
বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ফাইবার, এবং পটাসিয়াম থাকে। ভিটামিন এ
এবং ভিটামিন সি আমাদের দেহের হাড় এবং টিস্যুগুলির বিকাশে সহায়তা করে।
আঙ্গুর,
পেঁপে, আম, তরমুজ এবং এপ্রিকোট ভিটামিন এ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এছাড়াও
ভিটামিন এ গাজর, মটর, কুমড়ো, ব্রকলি, শাক, বাঁধাকপি, মিষ্টি আলু ইত্যাদি
শাকসব্জিতেও পাওয়া যায়। পাশাপাশি, সাইট্রাস ফল, বেরি, আলু এবং টমেটোতে ভিটামিন
সি রয়েছে যা হাড়ের সুস্থ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং আমাদের উচ্চতায় বৃদ্ধিতে
সহায়তা করে।
৭. আমন্ড বাদামঃ
লম্বা হতে চাইলে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আমন্ড বাদাম রাখুন।
লম্বা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ গুলো প্রয়োজন হয় তা
আমন্ড বাদাম থেকে পাওয়া যায়। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন ই, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ এবং ম্যাগনেসিয়াম। বাদাম আমাদের হাড়ের
গঠনকে মজবুত করে এবং উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৮. দইঃ
দুধের
তৈরি খাদ্য বলে দইতেও প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন থাকে। এর পাশাপাশি এতে ক্যালসিয়াম,
ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম থাকে। দইয়ে বিদ্যমান প্রোবায়োটিক আমাদের মেটাবলিসম
বাড়িয়ে উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও দই হজমে সহায়তা করে আমাদের
ইমিউনিটি সিস্টেম বিল্ড আপ করে। প্রতিদিন খাবার পরে দই খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য
ভালো।
৯. মিষ্টি আলুঃ
ভিটামিন এ সমৃদ্ধ মিষ্টি আলু আমাদের হাড় গঠন এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি
একটি আঁশযুক্ত খাবার যা আমাদের পরিপাকতন্ত্রের জন্য উপকারি। এছাড়াও মিষ্টি আলুতে
আছে ভিটামিন সি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এই খাবারটি আপনার
পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে আপনাকে লম্বা হতে সাহায্য করবে।
১০. সয়াবিনঃ
আপনি যদি মাছ-মাংস খেতে পছন্দ না করেন তবে আপনার সেই প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য
সয়াবিন খেতে পারেন। নিরামিষ জাতীয় খাবারগুলোর মধ্যে সয়াবিনে সবচেয়ে বেশি
প্রোটিন থাকে। সয়াবিনে থাকা বিশুদ্ধ প্রোটিন দেহের হাড় এবং টিস্যু ভর উন্নত করতে
সাহায্য করে। লম্বা হওয়ার জন্য, প্রতিদিন অন্তত ৫০ গ্রাম সয়াবিন খাদ্যতালিকায়
রাখুন।
এই ছিল লম্বা হওয়ার জন্য কি কি খাবার খাওয়া উচিত তার একটি সংক্ষিপ্ত লিস্ট। তবে এসব খাবার খাওয়ার সাথে সাথে আপনাকে দিনে অন্তত তিন থেকে চার লিটার পানি পান করতে হবে। লম্বা হওয়ার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমও কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলার সাথে সাথে এ ব্যাপারগুলোও খেয়াল রাখতে হবে।
Post a Comment