চিকন স্বাস্থ্যকে অনেকে সুস্বাস্থ্য বলে মনে করে থাকেন, কিন্তু আদতে ব্যাপারটা তেমন নয়। অতিরিক্ত চিকন হওয়াটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য হতে পারে হুমকিস্বরূপ। চিকন ব্যাক্তিরা সাধারণত হীনমন্যতায় ভোগেন এবং মোটা হওয়ার উপায় খুঁজে বেড়ান। সারাদিন এটা ওটা খেতে থাকেন এই ভেবে যদি একটু হলেও মোটা হতে পারেন। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না সঠিক ক্যালোরি মেপে না খেলে আপনি যতই খান না কেন, তাতে কিন্তু আপনার ওজন তেমন একটা বাড়বে না। তাই স্বাস্থ্য বাড়াতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে সঠিক উপায়ে মোটা হওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে।
অনেক সময় পুষ্টিহীনতার কারণে আমাদের দেহের ওজন বৃদ্ধি প্রাপ্ত হতে বাধাগ্রস্ত হয়। আবার অনেকেরই খাবারে রুচি না থাকার কারনে ঠিকমত খেতে পারেন না। প্রচুর খেয়েও যখন এক পাউন্ড ওজন বাড়াতে পারেন না এবং দ্রুত হতাশ হয়ে পরেন। যারা ইতিমধ্যে হয়তো মোটা হওয়ার যাত্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছেন, তারা আজকে জেনে নিতে পারেন, মোটা হওয়ার সহজ এবং কার্যকরী উপায় সম্পর্কে। চলুন জেনে নেই...
সহজে মোটা
হওয়ার উপায় গুলো কি কি?
মোটা হওয়ার
জন্য সবার প্রথমে আপনাকে জানতে হবে আপনি প্রতিদিন কত ক্যালরি ইনটেক করছেন এবং কত
ক্যালরি বার্ন করছেন। ওজন বৃদ্ধি এবং ঘাটতির পুরো প্রক্রিয়াটি নির্ভর করে আমাদের
দৈনন্দিন জীবনধারার উপর।
বেঁচে থাকতে এবং সুস্থ জীবন ধারণ করতে প্রতিদিন আমাদের কিছু নির্দিষ্ট পরিমান ক্যালরি প্রয়োজন হয়ে থাকে। যা আমরা বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাদ্য থেকে পেয়ে থাকি। মোটা হতে হলে আমাদেরকে আমাদের চাহিদার তুলনায় বাড়তি ক্যালোরি গ্রহন করতে হবে। এবং প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ক্যালোরি খরচ করা যাবে না। মোটা হওয়ার জন্য আরো যা যা করতে হবে তা হলোঃ
১. আপনার বিএমআই জেনে নিন
প্রথমেই গুগল
থেকে আপনার বিএমআই অর্থাৎ বডি মাস ইনডেক্স বের করে নিন। এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন দৈনিক আপনার কতটুকু
ক্যালরি গ্রহন করা প্রয়োজন। বিএমআই
আমাদের ওজন, উচ্চতা
এবং মুভমেন্টের পরিমাপ গণনা করে প্রয়োজনীয় ক্যালোরির হিসাব বের করে দেয়। অর্থাৎ আপনি মোটা অথবা চিকন, যে স্বাস্থ্যের অধিকারী
হতে চান না কেন, আপনাকে শুরুতেই আপনার বিএমআই জেনে নিতে
হবে।
২. খাদ্যতালিকায় বেশি পরিমাণে প্রোটিন রাখুন
প্রোটিনযুক্ত
খাবার দেহের মাসল গঠনে সহায়তা করে।
খাদ্যতালিকায় বেশি পরিমাণে প্রোটিন রাখার মানে এই না যে আপনি প্রতিদিন বেশি করে মাংস
খাবেন। অবশ্যই আপনাকে ক্যালরি হিসাব করে প্রাণিজ
প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। প্রতিদিনের
খাদ্যতালিকায় মাছ, ডিম, মুরগির মাংস, খাসির
মাংস এবং অন্যান্য মাংস, শিমের বিচি, ডাল ইত্যাদি রাখুন। এছাড়াও নিয়ম করে প্রোটিন শেক খেতে পারেন। প্রোটিন
শেক বাজার থেকে কিনে অথবা ঘরেই বানিয়ে খেতে পারেন। ইউটিউবে অনেক ধরনের প্রোটিন শেক তৈরীর রেসিপি পেয়ে
যাবেন।
৩. ফ্যাটযুক্ত খাবার খান
ফ্যাট জাতীয়
খাবার বলতে আমরা বেশিরভাগই তেল-চর্বিকেই বুঝি। কিন্তু ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের ভিতরেও প্রকারভেদ রয়েছে। যেমনঃ ভালো ফ্যাট আমাদের শরীরের মাসল সুগঠিত করতে
সাহায্য করে এবং খারাপ ফ্যাট আমাদের রক্তে চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে আমাদের
স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। ঘি, পনির, অলিভ অয়েল, মাছের তেল, ডিমের কুসুম এগুলো আমাদের শরীরের জন্য ভালো ফ্যাট।
৪. হাই-কার্ব ডায়েট ফলো করুন
আপনার
দৈনন্দিন খাবারে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। ভাত, আলু, আটা, ভুট্টা ইত্যাদি কার্বোহাইড্রেট যুক্ত
খাবার আপনার প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় রাখুন। তবে চিনি এবং চিনিজাতীয় খাবার
কোমল পানীয় এসব বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। চিনির বদলে মধু খেতে
পারেন মধু স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিন সকালে ঠান্ডা পানির সাথে মধু
মিশিয়ে খেলে তা আমাদের মোটা হতে সাহায্য করে। জেনে খুশী হবেন, মধু ওজন কমাতে এবং বাড়াতে
দুই ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৫. দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার খান
দুধ একটি
সুষম খাদ্য যার মাঝে খাবারের ছয়টি উপাদানেরই সমন্বয় রয়েছে। প্রতিদিন দুধ এবং দুধের তৈরি খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে
তুলুন। দুধের তৈরি খাবার যেমনঃ দই, ছানা, পুডিং, বাটারমিল্ক এগুলো খাবার আমাদের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। যারা দুধ খেতে পছন্দ করেন না তারা দুধের তৈরি খাদ্য
খেয়ে দুধের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারেন।
৬. ব্যায়াম করুন
অনেকেই মনে
করেন শুধুমাত্র চিকন হতে চাইলেই ব্যায়াম করতে হয়। কিন্তু এই ধারনাটি সম্পুর্ন ভুল। আপনি যখন ওজন বাড়িয়ে মোটা হতে চাইবেন তখনও আপনার
শারীরিক ব্যায়াম প্রয়োজন। প্রতিদিন কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। এতে
খাবার সহজে পরিপাক হবে এবং দ্রুত হজম হয়ে যাবে। যা ওজন বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
৭. ফল এবং শাকসবজি খান
শাকসবজি এবং
ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেলস থাকে। যা আমাদের শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে আমাদের ওজন
বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং আমরা মোটা হতে পারি। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শাকসবজি এবং ফলমূল রাখুন। তবে খাবারের সময় প্রথমে প্রোটিন খাবার আগে খেয়ে
তারপরেই শাকসবজি খাবেন।
৮. পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম মোটা হওয়ার জন্য অপরিহার্য
পর্যাপ্ত
পরিমাণে ঘুম মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী। প্রতিদিন আপনার ভালো ঘুম হলে ওজন খুব দ্রুত বৃদ্ধি
পাবে। সাধারণত ডাক্তাররা দিনে রাতে মিলিয়ে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ
দিয়ে থাকেন। কিন্তু ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে আপনি দুপুরের
দিকে একটু বাড়তি সময় ঘুমিয়ে নিতে পারেন।
৯. বাদাম এবং পিনাট বাটার রাখুন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়
বাদাম এবং
পিনাট বাটার ওজন বাড়াতে এবং মোটা হওয়ার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। বাদাম প্রোটিনযুক্ত খাবার হলেও এতে আরও রয়েছে
ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি টুয়েলভ এবং ক্যালসিয়াম। এবং পিনাট বাটার হচ্ছে হাই ক্যালরিযুক্ত
খাবার। মোটা হতে চাইলে আপনাকে খাদ্য তালিকায়
বাড়তি ক্যালরি রাখতেই হবে। বাদাম এবং
পিনাট বাটার আপনার প্রত্যেক বেলার খাবারে রাখতে পারেন।
১০. অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার
এবং জাঙ্ক ফুড পরিহার করুন
অনেকেই মনে
করেন জাঙ্ক ফুড এবং তেলযুক্ত খাবার খেলে মোটা হয়ে যায়, তাই এসব খাবার বেশি বেশি
করে খান। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন এসব খাবারে মোটা হওয়া
যায়, কিন্তু তা অত্যন্ত
অস্বাস্থ্যকর উপায়ে। আপনার
স্বাস্থ্যের জন্য এই খাবারগুলো খুবই ক্ষতিকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ। এসব খাবার দীর্ঘদিন খেলে আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের
পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হৃদরোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। পাশাপাশি অন্যান্য রোগের ঝুঁকি
বাড়ে যেমন ডায়াবেটিস, প্রেসার, ওবিসিটি, এমনকি
ক্যান্সারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই স্বাস্থ্যকর উপায়ে মোটা হওয়ার চেষ্টা করাটাই
সবচাইতে নিরাপদ।
পরিশেষ
এই ছিলো মোটা
হওয়ার কিছু সহজ পদ্ধতি। তবে মোটা
হতে গিয়ে ভুল পদ্ধতি অনুসরণ করে নিজের জন্য বিপদ ডেকে আনবেন না। মনে রাখবেন
সবসময় স্বাস্থ্যকর উপায়গুলো মেনে ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। এতে আপনি সুঠাম দেহের হওয়ার সাথে সাথে সুস্বাস্থ্যেরও
অধিকারী হতে পারবেন।
তবে অনেক সময় স্বাস্থ্যগত কোন সমস্যার কারণে ওজন হ্রাস পেতে থাকে। অথবা দীর্ঘদিন যাবত কোন ওষুধ সেবনের ফলেও খাবারের প্রতি অনিহা চলে আসে। তেমন হলে মোটা হওয়ার উপায় গুলো আপনার জন্য কার্যকরী নাও করতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তবে আপনার যদি অন্য কোন শারীরিক সমস্যা না থেকে থাকে তবে এই উপায়গুলো অনুসরণ করলে খুব দ্রুত আশানুরূপ ফল পাবেন। এবং আপনার কাঙ্খিত স্বাস্থের অধিকারী হতে পারবেন।
শরীর সম্পর্কে এত সচেতন মৌলক পোষ্ট অামার খুব ভালো লাগছে কারন মানুষের জীবনে স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে মন প্রান সব ঠিক থাকে। সচেতন হওয়ায় উচিত সবার
ReplyDeleteকমেন্ট করে আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।।
DeletePost a Comment