পেটের মেদ কমানোর ৭টি সহজ উপায় - Slim Body Tips - Bangla Health Tips

পেটের মেদ বা চর্বি নিয়ে বিপাকে পড়ে যান অনেকেই
কারণ আমাদের শরীরের অধিকাংশ চর্বি প্রথমেই পেটের অংশে জমা হয়ে থাকে অনেকেই জানতে চান পেটের মেদ কমানোর সহজ উপায় কি? তাই আজকের আর্টিকেলে থাকছে পেটের মেদ কমানোর ৭টি সহজ উপায় নিয়ে

প্রথমেই জানতে হবে আপনার পেটের আদর্শ পরিমাপ কতো এর ফলে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার পেট থেকে কতটুকু বাড়তি মেদ কমিয়ে ফেলতে হবে একটি ইঞ্চি টেপ নিয়ে আপনার পেটের পরিধি পরিমাপ করে নিতে পারেন সাধারণত পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪০ ইঞ্চি (১৩০ সেন্টিমিটার) এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৩৫ ইঞ্চি (৮৮ সেন্টিমিটার) থেকে শুরু করে পরিমাপগুলোকে পেটের স্থূলতা হিসেবে ধরা হয়।

তাহলে আপনি এখন নিশ্চয়ই সহজে বুঝতে পারছেন আপনার পেটের বাড়তি মেদ কতটুকু মূলত আমাদের শরীরে দুই ধরনের মেদ থাকে, একটি প্রয়োজনীয় মেদ যা আমাদের শরীরের মাংসপেশি সুগঠিত করতে সাহায্য করে। এবং অন্যটি ক্ষতিকর মেদ যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় তাহলে চলুন জেনে নেই,

পেটের মেদ কমানোর সহজ উপায় গুলো ….


১. চিনি জাতীয় খাবার পরিহার করুন
:

চিনি একটি শর্করাজাতীয় খাদ্য পেটের বাড়তি মেদের অন্যতম কারণ হচ্ছে চিনিযুক্ত খাবার চিনিযুক্ত খাবার প্রচুর পরিমাণে খেলে আমাদের ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

চিনিতে থাকে অর্ধেক গ্লুকোজ এবং অর্ধেক ফ্রুক্টোজ গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত পরিমাণ ফ্রুক্টোজ গ্রহণের কারণে আমাদের পেট এবং লিভারের চারপাশে মেদ তৈরি হয় এর ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়াও পেটের মেদ এবং লিভারের চর্বি আমাদের শরীরে ইনসুলিন তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে। তাই চিনি যুক্ত খাবার থেকে শুরু করে কোমল পানীয় পান করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যেসব বাচ্চারা প্রতিদিন কোমল পানীয় অতিরিক্ত পরিমাণে পান করে, তাদের স্থূলতার সম্ভাবনা বাকি শিশুদের থেকে প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়ে যায় তবে ফলমূলে বিদ্যমান চিনির ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয় বরং এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যেকর ফলের রসে বিদ্যমান চিনি ক্ষতিকারক ফ্রুক্টোজ ধ্বংস করতে সহায়তা করে

২. বেশি পরিমাণে প্রোটিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করুন:

পেটের মেদ কমানোর জন্য প্রোটিন হতে পারে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রোটিন আমাদের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং খাদ্যের চাহিদা প্রায় ৬০ শতাংশ কমিয়ে নিয়ে আসে। অর্থাৎ প্রোটিন আমাদের প্রতিদিনকার খাদ্যতালিকা থেকে প্রায় ৪৪১ ক্যালোরি কম খাদ্য গ্রহণ করতে সহায়তা করে

প্রোটিন আমাদের পেটের মেদ কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে। অনেকগুলো গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যেসব ব্যক্তিরা প্রোটিন থেকে ২৫-৩০% ক্যালরি গ্রহণ করে থাকে তাদের ওজন হ্রাসের সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি হয় প্রোটিন জাতীয় খাবার হিসেবে খেতে পারেন ডিম, দুধ, মাছ, বাদাম, মাংস, শিমের বিচি এবং দুধের তৈরি খাদ্য। এছাড়াও দোকান থেকে আপনি অনেক ধরনের প্রোটিন পাউডারও কিনতে পেয়ে যাবেন। যা প্রোটিন শেক হিসেবে অনেকেই খেয়ে থাকেন

৩. কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে দিন:

পেটের বাড়তি মেদ কমাতে চান? তাহলে আজই খাদ্য তালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে দিন সীমিত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ মেদ কমানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকরী উপায় বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে লো-কার্ব ডায়েটগুলো ওজন কমানোর ক্ষেত্রে লো-ফ্যাট ডায়েটের চেয়ে প্রায়শ দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ দ্রুত কাজ করে এছাড়া কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণে আমাদের পেটের ভিতর যকৃতের চারপাশের ক্ষতিকর চর্বিগুলো ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে

খাদ্যতালিকা থেকে ভাত, আটা, আলু, ক্যান্ডি ইত্যাদি কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। আর আপনি যদি দ্রুত পেটের মেদ কমাতে চান তাহলে কিটো ডায়েট করতে পারেন। তবে তার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিবেন কারণ কিটো ডায়েটের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যা সম্পর্কে আপনাকে প্রথমেই সতর্ক হয়ে নিতে হবে।  এছাড়াও মেদ কমাতে লো-কার্ব ডায়েট অত্যন্ত কার্যকরী

৪. প্রতিদিন ব্যায়াম করুন:

পেটের মেদ কমাতে ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই ব্যায়াম আমাদের শরীরের অতিরিক্ত মেদ অথবা চর্বি ঝরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। এছাড়াও ব্যায়ামের ফলে আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং খাদ্য পরিপাক ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ব্যায়াম শুধুমাত্র ওজন কমাতেই সাহায্য করে না, এটি  হ্রাসকৃত ওজন পুনরায় ফিরে আসতেও বাধা দেয়।

শুধুমাত্র পেটের মেদ কমানোর জন্যই অনেক ধরনের ব্যায়াম রয়েছে। তবে আপনাকে পেটের মেদ কমাতে হলে পুরো শরীরের মেদ কমাতে হবে। কারণ আলাদা করে শুধুমাত্র একটি অংশের মেদ কমানো সম্ভব নয়। পেটের মেদ কমাতে কার্ডিও ব্যায়ামগুলো করতে পারেন যেমনঃ হাটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, দড়িলাফ এই ব্যায়ামগুলো পেটের মেদ কমাতে দারুন ভাবে কাজ করে

৫. প্রতিদিনকার ক্যালরি গ্রহণের একটি হিসাব রাখুন:

আমরা অনেকেই জানি মেদ কমাতে আমাদের কি কি খাওয়া উচিত এবং কি কি খাওয়া উচিত নয় তবে আমরা সারাদিনে কতটুকু ক্যালোরি গ্রহণ করছি সে সম্পর্কে সঠিক হিসাব রাখতেই ভুলে যাই। অথচ মেদ কমানোর প্রথম শর্তই হচ্ছে ক্যালরি মেপে খাদ্য গ্রহণ প্রত্যেকটি খাবারে বিদ্যমান ক্যালরির পরিমাণ আলাদা

বেশিরভাগ সময় দেখা যায় আমরা জানি না কোন খাবারে কি পরিমান ক্যালরি রয়েছে তাই প্রথমেই প্রত্যেকটি খাদ্যের ক্যালরির পরিমাণ জেনে একটি চার্ট তৈরি করে নিন। আজকাল বাজারে অনেক ধরনের কিচেন স্কেল অহরহ পাওয়া যায় কিচেন স্কেলে খাবারের পরিমাণ এবং ক্যালরি মেপে খাদ্য গ্রহণ করলে খুব দ্রুত আপনার কাঙ্খিত ফলাফলে পৌঁছতে পারবেন

৬. খাদ্যতালিকায় ফাইবার যুক্ত খাবার রাখুন:

প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যুক্ত খাবার খেলে তা আমাদের শরীর থেকে মেদ কমাতে দারুন ভাবে কাজ করে তবে কি ধরনের ফাইবার আপনি গ্রহণ করছেন সেটি সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে নিতে হবে

দেখা গিয়েছে যে সব ধরনের ফাইবার সহজে দ্রবীভূত হয়ে যায় সেই ফাইবারগুলো মেদ কমাতে সাহায্য করে। খাদ্যে বিদ্যমান ফাইবার আমাদের পাকস্থলীতে যেয়ে এক ধরনের ঘন জেল সৃষ্টি করে। এই জেলগুলো সাধারণত আমাদের অন্ত্রে অবস্থান করে এবং আমাদের খাদ্য হজমের প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। ফলে আমাদের ঘন ঘন ক্ষুধা অনুভব হয় না। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রতিদিন মাত্র ১০ গ্রাম ফাইবার গ্রহণে পেটের চর্বি ৩.৭ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়

৭. নিজেকে চিন্তা মুক্ত রাখুন:

শরীরের মেদ কমাতে নিজেকে চিন্তামুক্ত রাখাটাও অত্যন্ত জরুরী কারণ আমরা যখন বেশিরভাগ সময় দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ভাবে কাটাই তখন আমাদের শরীরের থেকে প্রচুর পরিমাণে স্ট্রেস হরমোন নির্গত হয় স্ট্রেস হরমোন আমাদের খাদ্য পরিপাকে বাধা সৃষ্টি করে ফলে যেসব খাবার হজম হতে বাধা পায় তা আমাদের শরীরে বাড়তি মেদ হিসেবে জমা হয়ে যায়

সব সময় হাসি খুশি এবং চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন এতে আমাদের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের মেদ কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণ স্ট্রেস আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর

পরিশেষ:

পেটের বাড়তি মেদ আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের ঝুঁকি কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয় বেশিরভাগ মানুষ তাদের মেদ কমাতে একটি স্বাস্থ্যকর জীবন ধারা অনুসরণ করে থাকে। মনে রাখবেন পেটের মেদ একবার কমিয়ে তারপর যদি আবার আগের জীবন ধারায় ফিরে যান তাহলে সেই মেদ পুনরায় ফিরে আসতে সময় লাগবে না। অর্থাৎ আপনার সকল পরিশ্রম বৃথা হয়ে যাবে যদি না আপনি আপনার ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখেন

এই ছিল পেটের মেদ কমানোর সহজ উপায় নিয়ে আজকের আর্টিকেল। আপনি যদি আপনার বাড়তি মেদ ঝরিয়ে ফেলতে চান তবে উপায়গুলো নিয়মিত অনুসরণ করুন, এবং আমাদের জানান আপনার প্রতিক্রিয়া

Post a Comment

Previous Post Next Post