চুল পড়া নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্যই একটি মারাত্মক দুশ্চিন্তার বিষয়। এ সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে চুল পড়া বন্ধের উপায়। তবে তারও আগে খুঁজে বের করতে হবে এর মূল কারণ।
চুল পড়ে
যাওয়ার অনেক ধরনের কারণ থাকতে পারে। হতে পারে
সেটা স্বাস্থ্যগত অথবা বংশগত কোন সমস্যা। চুল পড়ার সাথে আপনার শারীরিক অনেক সমস্যার যোগসূত্র থাকতে পারে। অথবা চুল
পড়ার কারণ হতে পারে অতিরিক্ত মানসিক চাপ। প্রথমেই একনজরে চুল পড়ার কারণ গুলো দেখে নেয়া যাকঃ
- · পুষ্টিহীনতা
- · শারীরিক অসুস্থতা
- · ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- · দুশ্চিন্তা
- · অনিদ্রা
- · মানসিক চাপ
- · হরমোনের সমস্যা
- · বয়ঃসন্ধি
- · গর্ভাবস্থা
- ·
জন্মনিরোধক পিল/ ইমার্জেন্সি পিল
যেহেতু আমাদের একেকজনের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনধারা একেক রকম, তাই আমাদের চুল পড়া বন্ধের উপায়গুলোও আলাদা। আজকে ১০ টি সহজ এবং কার্যকরী উপায়ের কথা বলবো, যার মাধ্যমে আপনি নিজেই বের করে নিতে পারবেন আপনার জন্য কোন উপায়টি মানানসই। তাহলে চলুন জেনে নেই,
চুল পড়া বন্ধের উপায় গুলো কি কি?
সাধারণত চুল পড়া বন্ধের জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের বিউটি টিপস অনুসরন করাটাকেই সবচেয়ে ভালো মনে করে থাকি। কিন্তু বেশিরভাগ সময় বিউটি টিপস গুলো তেমন একটা আশানুরূপ ফল দিতে পারেনা। কারণ শুধু টিপস ফলো করলেই তো হবে না, আপনাকে জানতে হবে চুল পড়ার আসল কারণটা কি? একবার যদি মূল সমস্যাটা ধরে ফেলেন, তাহলে সমাধান করতে আর বেশি সময় লাগবে না। তারপর নিয়মিত চুলের যত্ন নিলেই আপনার চুল পড়া ধীরে ধীরে কমে আসবে। চুল পড়া বন্ধের জন্য যা যা করতে হবেঃ
১. নিয়মিত চুল পরিষ্কার রাখুনঃ
চুল পড়ার অন্যতম একটি কারণ আমাদের চুলের গোড়া অপরিষ্কার থাকা। চুলের গোড়ায় ময়লা জমে খুশকি, অ্যালার্জি এবং আরো নানা ধরনের স্কিন প্রবলেম হতে পারে। এর কারণে চুল খুব দ্রুত ঝরতে থাকে। তাই প্রতিদিন আপনার চুল শ্যাম্পু দিয়ে পরিস্কার করে ফেলুন। তবে খেয়াল রাখবেন বেশি কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু নিয়মিত ব্যবহারে চুলের ক্ষতি হতে পারে। তাই চুল ধোয়ার জন্য হালকা কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পুগুলো ব্যবহার করুন।
২. ভিটামিন ই এবং ডিঃ
চুলের গোড়া মজবুত এবং বেড়ে উঠায় সাহায্য করতে ভিটামিন অত্যন্ত কার্যকরী। ভিটামিন ই আমাদের চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং ফলিকেলস গুলো উৎপাদন বজায় রাখে। বাজারে চুল পড়া বন্ধের জন্য অনেক ধরনের ভিটামিন ই ক্যাপসুল পাওয়া যায়। তবে চুল পড়া বন্ধের জন্য খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ই যুক্ত খাবার রাখাটা জরুরী। যেমন বিভিন্ন ধরনের খাবার তেল, বাদাম, সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই থাকে। অপরদিকে ভিটামিন ডি আমাদের চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৩. খাদ্য তালিকায় প্রোটিনযুক্ত খাবার রাখুনঃ
আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রতঙ্গের বিকাশের ক্ষেত্রে প্রোটিনযুক্ত খাবার মূখ্য ভূমিকা রাখে। প্রোটিন আমাদের চুলের গোড়া মজবুত করে তা বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। তাই চুল পড়া বন্ধের জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন মাছ, মাংস, সয়াবিন, ডাল ইত্যাদি।
৪. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুনঃ
পানি আমাদের শরীরকে হাইড্রেট রেখে চুল পড়া রোধ করতে সহায়তা করে। শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে চুল পড়া সহ আরো অনেক ধরনের অসুখ-বিসুখ হয়ে থাকে। তাই দিনে অন্তত তিন থেকে চার লিটার পানি পান করুন। এতে চুলের গ্রোথ ভালো হবে এবং চুল পড়া বন্ধ হবে।
৫. পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করুনঃ
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর এবং সহজপাচ্য খাবার রাখুন। আমাদের চুল গজানো এবং বেড়ে উঠার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে থাকে বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে। চুল পড়া বন্ধের জন্য প্রোটিন এবং ভিটামিন এর পাশাপাশি আয়রন এবং জিঙ্কযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। অতিরিক্ত তেলযুক্ত এবং জাঙ্কফুড পরিহার করে চলুন।
৬. নারিকেল তেলঃ
চুলের যত্নে নারিকেল তেল যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আদিকালের এই কার্যকরী উপায়টি চুলের জন্য খুবই উপকারী। যদিও অনেকের কাছে চুলে নারিকেল তেল ব্যবহার করাটা তেমন একটা পছন্দের না। তবে নারকেল তেল রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে চুলের গোড়ায় পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে। চুল পড়া রোধে সপ্তাহে তিন দিন চুলের গোড়ায় কুসুম গরম নারকেল তেল ম্যাসাজ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
৭. প্রোটিন ট্রিটমেন্টঃ
চুল পড়া বন্ধের জন্য প্রোটিন ট্রিটমেন্ট বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় এবং কার্যকরী। বেশিরভাগ পার্লারেই আজকাল চুলের জন্য প্রোটিন ট্রিটমেন্ট করিয়ে থাকে। তবে আপনি যদি পার্লারে যেতে না চান তবে ঘরে বসেই প্রোটিন প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। ইউটিউবে অনেক ধরনের প্রোটিন প্যাক এর রেসিপি পেয়ে যাবেন। সেখান থেকে আপনার ত্বকের সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি প্রোটিন প্যাক পছন্দ করে নিবেন। ভালো ফলাফলের জন্য প্রোটিন প্যাকটি সপ্তাহে এক দিন অথবা ১৫ দিন অন্তর অন্তর ব্যবহার করতে পারেন।
৮. অ্যালোভেরাঃ
ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা শুরু করে চুল পড়া রোধের জন্যও অ্যালোভেরা অত্যন্ত কার্যকরী। এটি আমাদের চুলের ফলিকলগুলোকে স্বাস্থ্যকর, উজ্জ্বল এবং কোমল করতে সাহায্য করে। যদি এখন পর্যন্ত আপনি চুল পড়া বন্ধ করতে অ্যালোভেরা ব্যবহার না করে থাকেন তবে আজ থেকে মাথার ত্বকে অ্যালোভেরার জেল ম্যাসেজ করা শুরু করে দিন। নিয়মিত ব্যবহারের ফলে দেখবেন আপনার চুল পড়া বেশ কমে গেছে।
৯. আপেল সিডার ভিনেগারঃ
চুল পড়ার অন্যতম একটি কারণ শুষ্কতা। এছাড়াও ময়লা এবং ব্যাকটেরিয়া দ্বারা চুলের ফলিকলগুলি আটকে যেতে পারে। এর ফলে প্রাকৃতিক তেলগুলিতে চুলের গোড়ায় পৌঁছতে পারে না। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করতে পারেন আপেল সিডার ভিনেগার। এটি চুলের গোড়ায় ময়লা পরিষ্কার করে ফেলে এবং চুল পড়া রোধে সহায়তা করে।
১০. আমলকিঃ
আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা চুল পড়া রোধে অত্যন্ত কার্যকরী। চুলের যত্নে আমলকির ব্যবহার নতুন নয়। আমাদের নানি-দাদীদের আমল থেকেই দেখে আসছি আমলকি, হরতকি এবং মেথির ব্যবহার। চুল পড়া রোধে কাঁচা এবং রোদে শুকানো আমলকি দুটি অনেক উপকারী। শুকনো আমলকি সারারাত ভিজিয়ে রেখে দিন। গোসলের আগে ঘণ্টাখানেক রেখে তারপর পরিষ্কার পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্যবহারের কয়েকদিন পর থেকে দেখবেন আপনার চুল পড়া কতটা কমে গেছে।
করনীয়
চুল পড়া
বন্ধের উপায় গুলো মেনে চলার সাথে সাথে আপনাকে আরও কিছু ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে।
যেমন
- ·
ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন।
- ·
চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন।
- ·
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করবেন না।
- ·
ভেজা অবস্থায় চুল আঁচড়ানো থেকে বিরত থাকুন।
- ·
চুলের গোড়া ঘেমে যাওয়া থেকে রোধ করুন।
- ·
হেয়ার ড্রায়ার, স্প্রে, এবং হেয়ার স্ট্রেইটনার ব্যবহার
এড়িয়ে চলুন।
- ·
চুলে কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
- ·
হেয়ার কালার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
- ·
শরীরের যত্ন নিন।
- ·
জন্মনিরোধক পিল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।
- · ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করুন।
পরিশেষ
সাধারণত
সারাদিনে ১০০ থেকে ২০০ চুল পড়া স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে আপনার যদি অতিরিক্ত
পরিমাণে চুল ঝরে যেতে থাকে এবং কোন উপায়ে চুল পড়া বন্ধ না হয়, তবে অবশ্যই ডাক্তারের
পরামর্শ নেবেন। এছাড়াও
আপনার যদি কোন শারীরিক সমস্যা থেকে থাকে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিয়ে নেবেন।
তা নাহলে কোন উপায়েই আপনার চুল পড়া বন্ধ হবে না।
এই ছিল চুল
পড়া বন্ধের উপায় নিয়ে আজকের আর্টিকেল। আশা করি এই বিষয়গুলো মেনে চললে আপনার চুল পড়া কিছুদিনের মাঝেই কমে যাবে। আমাদের দেওয়া উপায়গুলো আপনার কেমন লাগলো কমেন্ট
সেকশনে জানাতে ভুলবেন না।
Post a Comment