আপনার সমবয়সী প্রায় সবারই সঠিক সময়ে দাড়ি গজিয়ে গেছে, কিন্তু আপনি পড়ে গেছেন মহা বিপাকে। ঠিকঠাক মতো দাড়ি না গজানোর কারনে বন্ধুমহলে প্রতিনিয়ত হাসির পাত্র হতে হচ্ছে আপনাকে। বর্তমান সময়ে অনেক উন্নত চিকিৎসা থাকলেও অনেকেই জানতে চান দাড়ি গজানোর প্রাকৃতিক উপায় কি? তবে তার আগে আপনাকে জানতে হবে দাড়ি না গজানোর কারণ কি?
সাধারণত
হরমোনজনিত অথবা বংশগত কারণে দাড়ি ঠিক মতো গজায় না। পুরুষ দেহে এক ধরণের হরমোন থাকে যার নাম টেস্টোস্টেরন। এই হরমোনের অভাবে দাড়ি গজানো ব্যহত হয় অথবা অনেক
দেরিতে গজায়। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আপনাকে
অবশ্যই নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তার সাথে কিছু প্রাকৃতিক উপায়
মেনে চললে দ্রুত এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
তাহলে চলুন
জেনে নেই দাড়ি গজানোর প্রাকৃতিক উপায় গুলো কি কি?
খাদ্যতালিকায় ভিটামিন এবং প্রোটিন রাখুন:
দাড়ি গজানোর ক্ষেত্রে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য
তালিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন এবং প্রোটিন
নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া ফলিকলস গুলোকে পুনরায় সক্রিয় করে তোলে। যার ফলে মুখমন্ডলের যেসব জায়গা থেকে দাড়ি গজানো বন্ধ
হয়ে গিয়েছিলো সেসব লোমকূপ থেকে নতুন করে দাড়ি গজানো শুরু করে। তাই প্রতিদিনকার
খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এবং প্রোটিন রাখাটা জরুরি। মাছ, ডিম, এবং দুগ্ধজাত খাবার থেকে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি এবং প্রোটিন পাওয়া যায়। মাংস এবং সামুদ্রিক মাছ
ভিটামিন বি১২ এর চাহিদা পূরণ করে। এছাড়াও ভিটামিন বি যুক্ত খাবার গুলোও দাড়ি গজানোর ক্ষেত্রে খুব কার্যকরী।নিয়মিত ব্যায়াম করুন:
ব্যায়াম আমাদের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বিকাশ ঘটানোর
সাথে সাথে হরমোনগুলোর ভারসাম্য রক্ষা করতেও সাহায্য করে। তবে কোনো গবেষণাতেই বলা
হয়নি যে ব্যায়াম দাড়ি গজাতে বা বৃদ্ধিতে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু ব্যায়াম
দেহের টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। তাই দাড়ি গজানোর ক্ষেত্রেও নিয়মিত ব্যায়াম যে উপকারী
এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ দেহে হরমোনের মাত্রা ঠিক থাকলে স্বাভাবিকভাবেই দাড়ি
গজাতে এবং বেড়ে উঠতে কোন সমস্যা হবে না।পরিমিত ঘুম:
আপনি যদি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমানে না ঘুমান তবে আপনার শরীরে টেস্টোস্টেরন
হরমোনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। যার ফলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দাড়ি গজানো এবং
বেড়ে উঠা বাধাপ্রাপ্ত হবে। সাধারণত
ঘুমের সময় আমাদের শরীরের ঘাটতিগুলো পূরণ হতে থাকে। ঠিকমতো ভালো ঘুম না হলে শারীরিক বিকাশেও সমস্যা হতে
পারে। যার কারণে শরীরের লোমকূপ সহ চুল এবং দাড়ি
বেড়ে উঠতে সমস্যা তৈরি হয়। তাই
প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।ধুমপান করা থেকে বিরত থাকুন:
ধূমপানের ফলে চুল পড়া বেড়ে যায় এবং তার সাথে দাড়ি গজানোও হ্রাস পেতে থাকে। তামাকের ধোঁয়ায় অনেক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এই রাসায়নিক পদার্থ দাঁড়ির কোষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার রক্তনালীদের প্রদাহ এবং ডিএনএর ক্ষতিসাধন করে থাকে। ফলে দাঁড়ির বৃদ্ধি স্বাভাবিক ভাবেই কমে যায়। তাই আপনি যদি দাড়ি ঘন করতে চান তবে প্রথমেই ধুমপান ত্যাগ করুন। এর ফলে আপনার ত্বকের প্রদাহ এবং রক্তনালীর ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যাবে। এবং আপনি খুব দ্রুত আপনার দাড়ি ঘন এবং বড় করতে পারবেন। যদিও ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করাটা বেশিরভাগ মানুষই অত্যন্ত কঠিন অথবা অসম্ভব মনে করেন। তবে ধীরে ধীরে চেষ্টা করতে থাকলে অবশ্যই এই অভ্যাসটি পরিবর্তন করা সম্ভব।মুখের ত্বক পরিষ্কার রাখুন:
সাধারণত বাতাসে থাকা ধুলিকনা এবং ময়লা দিয়ে আমাদের ত্বকের লোমকূপ গুলো আটকে যায়। যা প্রতিদিন পরিষ্কার করাটা অত্যন্ত জরুরি। তা নাহলে আটকে থাকা লোমকূপ গুলো থেকে সহজে দাড়ি গজাতে পারেনা। তাই প্রত্যেকবার বাহিরে থেকে ঘরে ফিরার পর একটি ভালো ব্র্যান্ডের ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলুন। এতে আপনার দাড়ি গজানোর সাথে সাথে দাড়ি ঘন হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে।লেবু এবং দারুচিনি:
লেবুর রস এবং দারুচিনি দাড়ি
বৃদ্ধিতে দারুন
কার্যকরী। লেবুতে ক্যালসিয়াম, সাইট্রিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো পুষ্টি থাকে যা দাঁড়ির বৃদ্ধি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। ২ চা চামচ লেবুর রসের সাথে ১ চা চামচ দারুচিনির গুড়া মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে নিন। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে বিশ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দ্রুত এবং ভাল ফলাফল পেতে চাইলে সপ্তাহে অন্তত দুবার এই
প্রাকৃতিক ঘরোয়া প্যাকটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আমলকির তেল:
দাড়ির বৃদ্ধির জন্য আমলকির তেল খুব উপকারী। আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা ত্বককে ভালো রাখার সাথে সাথে চুল এবং দাড়ি গজাতেও সাহায্য করে। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি তাই তেলটি আপনার মুখে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন। দুই তিন ফোঁটা তেল নিয়ে মুখের দাড়ি গজানোর অংশে ভালো করে ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট রেখে দিন। এরপর ভালো একটি ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। আশা করছি এই উপায়টি আপনার জন্য অনেক ফলদায়ক হবে।নারিকেল তেল:
নারকেল তেল একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। চুলের যত্নে নারিকেলের তেলের ব্যবহার আদিকাল থেকে চলে আসছে। একইভাবে দাড়ি গজানোর ক্ষেত্রে নারিকেল তেলের উপকারিতা অপরিসীম। এটি ত্বকের রুক্ষতা দূর করে দাড়ি গজাতে এবং ঘন করতে সাহায্য করে। নারকেল তেলের সাথে রোজমেরি তেল মিশিয়ে ব্যবহার করলে তা আরো বেশি কার্যকর হয়। নারকেল তেলের দশ ভাগের সাথে ১ ভাগ রোজমেরি তেল মিশিয়ে নিন। একটি তুলার বলের সাহায্যে মুখে মিশ্রণটি ব্যবহার করুন। প্রায় ১৫ মিনিটের মত রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফলের জন্য সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এটি ব্যবহার করতে পারেন।পরিশেষ:
এই ছিল দাড়ি
গজানোর প্রাকৃতিক উপায় নিয়ে আজকের আর্টিকেল। ঠিক সময় মতো দাড়ি না গজানোর জন্য
হীনমন্যতায় না ভুগে এই প্রাকৃতিক উপায়গুলো অনুসরণ করে দেখুন। অনেকেই মনে করেন
বারবার দাড়ি কামিয়ে ফেললে দ্রুত দাড়ি গজায়। কিন্তু এই ধারনাটি সম্পুর্ন ভুল। এতে আরো দাড়ি হালকা
হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এছাড়াও
আপনার হরমোনের সমস্যা গুরুতর হলে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আর
বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার ফলে সবকিছুই সম্ভব হয়ে উঠেছে। তাই দেরি না করে যেকোন সমস্যার চিকিৎসা করুন।
প্রিয় পাঠক, আমাদের আজকের আর্টিকেলটি
আপনার কাছে কেমন লাগলো তা আমাদের লিখে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।
Post a Comment