সঠিক পরিচর্যার অভাবে চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। অল্প বয়সেই চুল পড়ে নাজেহাল অবস্থায় পরেছেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহায়েতই কম নয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই জানতে চান দ্রুত চুল পড়া বন্ধের উপায় কি? আজকের আর্টিকেলে এমন কিছু প্রাকৃতিক উপায় বলে দিবো যা আপনার চুল পড়া বন্ধ করতে দারুনভাবে সাহায্য করবে। তাহলে চলুন জেনে নেই,
দ্রুত চুল পড়া বন্ধের উপায়গুলো কি কি?
১. হট অয়েল থেরাপি:
তেল আমাদের চুলের গোড়ার আদ্রর্তা ধরে রাখতে সাহায্য করে। সাধারণত আমাদের মাথার ত্বকের আদ্রর্তা কমে গেলে চুল পড়া সমস্যা আরো বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে হট অয়েল থেরাপি চুল পড়া বন্ধ করতে অনেকটাই কাজে দেয়। নারিকেল তেল অথবা সাধারণ হেয়ার অয়েল কুসুম গরম করে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করলে চুলের গোড়া যথেষ্ট মজবুত হয়। কয়েক সপ্তাহ এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করার পর লক্ষ্য করে দেখবেন আপনার চুল পড়া আগের তুলনায় অনেকাংশেই কমে গেছে। এই পদ্ধতিটি শুধুমাত্র চুল পড়া বন্ধ করতেই কাজ করে না বরং এটি নতুন চুল গজাতেও সহায়তা করে।২. ডিমের তৈরি হেয়ার প্যাক:
ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ভিটামিন ডি।
প্রোটিন আমাদের চুলের গোড়াকে মজবুত করে চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও
ডিম আমাদের চুলের রুক্ষতা দূর করে এবং চুলকে মসৃণ করে তোলে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য
তালিকায় অন্তত একটি করে ডিম রাখুন। তবে অনেকেই
আছেন ডিম খেতে মোটেও পছন্দ করেন না। সেক্ষেত্রে আপনার চুলের ধরণ অনুযায়ী ডিম
দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন পছন্দসই একটি হেয়ার প্যাক। ডিম দিয়ে তৈরি হেয়ার প্যাক চুল পড়া বন্ধ করতে যথেষ্ট
কার্যকরী। ৩. অ্যালোভেরা জেল:
চুল পড়া বন্ধ করতে অ্যালোভেরা জেল এতো বেশি কার্যকরী যে এর ব্যবহারে আপনি নিজেই অবাক হয়ে যাবেন। অ্যালোভেরা আমাদের চুলের স্ক্যাল্পের PH লেভেলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এতে চুল পড়া কমে যাওয়ায় সাথে সাথে নতুন চুল গজাতে থাকে। এছাড়াও অ্যালোভেরাতে আছে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই, যা চুলের পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য, যা মাথার ত্বককে যেকোনো ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। অ্যালোভেরা সরাসরি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। অথবা কাঁচা অ্যালোভেরার রস পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াও অনেক উপকারী।৪. মেথি:
চুলের পরিচর্যায় মেথির ব্যবহার অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। মেথিতে রয়েছে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং আয়রন। যা চুল পড়া বন্ধ করার সাথে সাথে চুলের বৃদ্ধি ঘটাতেও
সহায়তা করে। এছাড়াও আপনি যদি দ্রুত চুল ঘন করতে চান তবে মেথির ব্যবহার হতে পারে
অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপায়। কারণ মেথি
নতুন চুল গজাতেও দারুন ভাবে কাজ করে। মেথি গুঁড়া
করে অথবা সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরেরদিন পেস্ট করে ব্যবহার করুন। প্যাকটি আধা ঘন্টা থেকে ৪০মিনিট মাথায় রেখে ভালো করে
একটি মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত কিছু দিন ব্যবহার করার পর
নিজেই দেখবেন চুল পড়া অনেকাংশেই কমে গেছে।৫. নারিকেলের দুধ:
চুলের গোড়ায় পুষ্টি জুগিয়ে চুলকে মজবুত করে তুলতে নারিকেল দুধ অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। চুলের যত্নে নারিকেল তেলের পাশাপাশি নারিকেল দুধও ব্যবহার করতে পারেন। এটি চুলের ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে চুলকে মসৃণ করতেও সাহায্য করে। বাজারে নারিকেল দুধ পাউডার অথবা লিকুউড আকারের পেয়ে যাবেন, অথবা নিজেই ঘরে বসে তৈরি করে নিতে পারেন।৬. মধু এবং টক দই:
চুল পড়া বন্ধ করতে মধু এবং দই দারুন কার্যকরী। মধুর এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য চুলের গোড়াকে যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। অপরদিকে দইকে চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার বলা হয়ে থাকে। কারণ এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ভিটামিন B5, যা চুলের বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত উপযোগী। মধু এবং টক দই মিশিয়ে একটি হেয়ার প্যাক তৈরি করে নিন। সপ্তাহে এক থেকে দুবার এটি চুলের স্ক্যাল্পে লাগিয়ে আধা ঘন্টা রেখে ভালো ভাবে শ্যাম্পু করে ফেলুন। আপনার চুল পড়া তো বন্ধ হবেই সাথে চুল ঝরঝরে এবং মসৃন হয়ে যাবে।৭. পিঁয়াজের রস:
অনেকেই পিঁয়াজের গন্ধ সহ্য করতে না পারলেও এর রস কিন্তু
চুল পড়া বন্ধ করতে যথেষ্ট কার্যকরী। পিয়াজের
রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সালফার, যা চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এর ফলে চুল পড়া কমে গিয়ে চুলের গ্রোথ বেড়ে যায়। এছাড়াও পিঁয়াজের রস চুলের স্ক্যাল্পকে যেকোনো ইনফেকশন
থেকে রক্ষা করে। একটি কটন বল অথবা তুলার সাহায্যে পিঁয়াজের
রস চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর একটি মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালো ভাবে
পরিস্কার করে ফেলুন। সপ্তাহে
অন্তত একবার এটি ব্যবহার করতে থাকুন। পরিবর্তনটা
আপনি নিজেই লক্ষ্য করতে পারবেন।৮. বিটরুট:
চুল পড়া বন্ধ করতে বিটরুট ব্যবহারের কথা শুনে থাকবেন অনেকেই। এটি চুলের যাবতীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে যথেষ্ট
কার্যকর। বিটরুটে রয়েছে ভিটামিন B6, সি, ফলেট, পটাশিয়াম,
ম্যাগনেসিয়াম এবং বিটেইন। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য এই উপাদানগুলো অত্যন্ত
প্রয়োজনীয়। কয়েকটি বিটরুটের পাতা নিয়ে পানিতে জ্বাল করুন যতোক্ষণ না পানি
অর্ধেক হয়ে যায়। এরপর পাতাগুলোকে পেস্ট করে এর সাথে এক চামচ
হেনা মিশিয়ে নিন। এটি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ২০ মিনিট পর
হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনাকে আর চুল
পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগতে হবে না।৯. গ্রীন টি:
গ্রীন টি চুলের বৃদ্ধি এবং চুল পড়া রোধ করতে বেশ উপযোগী। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট চুলের আগা ফাটা এবং ভেঙ্গে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও এতে রয়েছে পলিফেনল যা চুলের গোড়ায় খুশকি রোধ করতে বেশ কার্যকরী। দুইটি গ্রীন টি ব্যাগ গরম পানিতে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এরপর গোসলের আগে মিশ্রনটি মাথার তালুতে ভালো করে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দুবার এটি ব্যবহার করুন। এতে চুল পড়া অনেকাংশেই কমে যাবে।১০. ক্যাস্টর অয়েল:
চুল পড়া বন্ধ করতে ডাক্তাররা প্রায়ই ক্যাস্টর অয়েল
ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ক্যাস্টর অয়েলে
থাকে ভিটামিন ই, প্রোটিন,
মিনারেলস, এবং এসেনসিয়াল ফ্যাটি এসিড,
যা চুলের গোড়া মজবুত করে চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে।
ক্যাস্টর অয়েল সাধারণত খুব ঘন হয়ে থাকে। তাই এটি অন্য একটি হেয়ার অয়েলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার
করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
পরিশেষ:
এই ছিলো
দ্রুত চুল পড়া বন্ধের উপায় নিয়ে আজকের আর্টিকেল। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে চুল পড়ার কারণ হতে পারে শারীরিক
কোনো সমস্যা। সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ
গ্রহণ করতে হবে। আবার অনেক সময় আমাদের খাদ্যতালিকা, পরিবেশ, লাইফস্টাইল
পরিবর্তনের কারণেও চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি গোসলের পানি পরিবর্তন
হলেও অনেকের চুল পড়তে থাকে। আর আপনার
যদি কোন শারীরিক সমস্যা না থেকে থাকে তবে আশা করছি কিভাবে চুল পড়া বন্ধ করা যায়
এই নিয়ে আর দুশ্চিন্তায় ভুগতে হবে না।
প্রিয় পাঠক
আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না।
Post a Comment