সুস্থতা সৃষ্টিকর্তার সবচাইতে বড় নিয়ামতগুলোর মধ্যে একটি। পৃথিবীর প্রত্যেকটি ব্যাক্তিই চায় সুস্থতার সাথে জীবনযাপন করতে। সুস্থতা আমাদের দৈনন্দিন জীবনধারার উপর অনেকাংশেই নির্ভর করে। তাই সুস্থ থাকার জন্য ডাক্তাররা একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে সুস্থভাবে জীবনযাপন করাটা তেমন কঠিন কিছু নয়।
তাই আজ জেনে নিন, সুস্থ থাকতে যে ১০টি নিয়ম মেনে চলবেন:
১. ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠুন:
বেশিরভাগ গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে ব্যক্তিরা ভোরে ঘুম থেকে উঠে তাদের সুস্থতার হার বাকিদের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ভোরবেলার আবহাওয়া আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কারণ এই সময় বাতাসের দূষণ কম থাকে এবং অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এছাড়া সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলে সারাদিনের কাজের স্পৃহা বেড়ে যায়। ফলে আমাদের শারীরিক প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হতে কোনো সমস্যা হয়না।শুধু তাই নয়
আমাদের মনকে সুস্থ এবং কর্মক্ষম রাখতে ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার কোনো বিকল্প নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের উপর একটি
গবেষণা চালান। যেখানে তারা দেখতে পান, সকালে ওঠা ছাত্রছাত্রীরা
বাকিদের তুলনায় অধিক মেধাবী হয়ে থাকে। তাই সুস্থ থাকতে এই অভ্যাসটি আপনাকে
অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
২. দিনটি শুরু করুন প্রার্থনা দিয়ে:
আমাদের শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করাটাও খুব জরুরি। দিনের শুরুটা প্রার্থনা দিয়ে করলে আমাদের শারীরিক কর্মক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া প্রার্থনা আমাদের মনকে পবিত্র করে এবং ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ বাড়িয়ে দেয়। সৃষ্টিকর্তার কাছে নিয়মিত প্রার্থনা করলে মানসিক বিষন্নতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যার ফলে আমাদের শাররীক অনেক রোগবালাই হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। মনে রাখবেন এই পৃথিবীটাকে আপনি দেখতে পাচ্ছেন আপনার সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহে। তাই সুস্থতার নিয়ামত চাইতে হলে প্রার্থনার কোনো বিকল্প নেই।৩. ব্যায়াম করুন:
ব্যায়াম আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী তা আমরা কমবেশি সবাই জানি। সুস্থ থাকার জন্য ডাক্তাররা স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এর পাশাপাশি ব্যায়াম করার ওপরও গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। সুস্থ থাকতে চাইলে শরীরের একটি আদর্শ ওজন বজায় রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি অথবা কম ওজন দুটোই আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। আর ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যায়াম এর চেয়ে ভাল কোন উপায় নেই। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি সকালবেলা হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলেন। তবে অনেকেই সময় স্বল্পতার কারণে সকালবেলা হাঁটতে বের হতে পারেন না। তাই দিনের যেকোনো ভাগে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করে নিতে পারেন।৪. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন:
সুস্থ থাকতে হলে আপনাকে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতেই হবে। মূলত প্রতিদিনকার খাবার থেকে আমাদের শরীর সব ধরনের চাহিদা পূরণ করে থাকে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শর্করা এবং প্রোটিনের পাশাপাশি শাকসবজি এবং ফলমূল রাখুন। কারণ শাকসবজি, এবং ফলমূলে থাকা ভিটামিন আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। যতটা সম্ভব বাহিরের অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং কোমল পানীয় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। কারণ বেশিরভাগ রোগবালাই এসব খাবার থেকে হয়ে থাকে। এছাড়া ভারী খাবারের বদলে সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করলে খাবার দ্রুত এবং সহজেই হজম হয়ে যায়। ধুমপান এবং যেকোনো ধরণের মাদকদ্রব্য আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই সুস্থ জীবনযাপনের জন্য এগুলো পরিহার করে চলুন।৫. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন:
আমাদের দেহের প্রত্যেকটি কোষ, টিস্যু এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সচল রাখতে পানির ভূমিকা অপরিসীম। পানি আমাদের শরীরে মিনারেলসের চাহিদা পূরণ করে থাকে। দীর্ঘদিন পানিশূন্যতায় ভুগলে লিভারজনিত সমস্যা থেকে শুরু করে আরো জটিল রোগ দেখা দিতে পারে।তাই সুস্থ
থাকতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা জরুরী। সাধারণত দৈনিক আট থেকে বারো
গ্লাস অথবা আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করাকে আদর্শ মনে করা হয়ে থাকে। তবে একেকজনের শারীরিক চাহিদা একেকরকম। তাই সবচেয়ে ভালো হয় নিজ নিজ শরীরের চাহিদা বুঝে পানি
পান করা।
৬. পরিমিত ঘুম:
ঘুমকে আমাদের শরীরের রিকভারি সিস্টেমও বলা হয়ে থাকে। প্রতিদিন আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমান ক্যালোরি খরচ হয়ে যায়। যা শুধুমাত্র খাবার দ্বাড়া পূরণ করা সম্ভব হয়না। এছাড়া পরিমিত ঘুম আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এতে উচ্চরক্তচাপ, স্ট্রোক, এবং হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়। সারাদিনের কাজকর্মের পর আমাদের শরীরের সাথে সাথে আমাদের মস্তিষ্কও ক্লান্ত হয়ে পরে। তবে ঘুমের সময় মস্তিষ্কের এই ঘাটতিগুলো ধীরে ধীরে পূরণ হতে থাকে। তাই দৈনিক সাত থেকে আট ঘন্টা ভালো ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।৭. মানসিকভাবে ভালো থাকুন:
সুস্থ থাকতে হলে নিজেকে হাসিখুশি রাখাটাও বেশ জরুরি। কারণ মনের সাথে শরীর গভীরভাবে সম্পর্কিত। তাই মন ভালো না থাকলে শরীরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। নিজেকে মানুসিকভাবে ভালো রাখতে কাজের পাশাপাশি বিনোদনের জন্য সময় বের করে নিন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, সবধরনের বিনোদন কিন্তু সুস্থ বিনোদন নয়। সুস্থ বিনোদন বলতে বোঝায় খেলাধুলা, বই পড়া, ভ্রমণ, টিভি অথবা কম্পিউটারে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান অথবা মুঠোফোনে বুদ্ধিমত্তার খেলা। এছাড়াও পরিবারের সাথে সুন্দর সময় কাটানোও আমাদের সুস্থ থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ যেসব বিনোদন আপনার মনকে প্রফুল্ল রাখবে তাকেই সুস্থ বিনোদন বলা যায়।৮. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন:
রোগবালাই থেকে বেচে থাকতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। খাবারের আগে পরে, বাহিরে থেকে আসার পর, যেকোনো কাজ শুরু করার আগে এবং পরে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। প্রতিদিনকার ব্যবহৃত কাপড় চোপড় এবং ঘরবাড়ি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে। তবে সুস্থ থাকতে হলে শুধু নিজেকে এবং ঘরবাড়ি পরিস্কার রাখাটাই যথেষ্ট নয়। ঘরের আশেপাশের জায়গা পরিস্কার রাখাটাও জরুরি। এমনকি রাস্তাঘাট নোংরা না করাটাও একজন সুনাগরিকের নৈতিক দ্বায়িত্ব। এতে তেমন নিজেদের চারপাশ পরিষ্কার থাকবে তেমনি পরিবেশ দূষণের মাত্রাও কমে যাবে।৯. ডিভাইস আসক্তি থেকে দুরে থাকুন:
বর্তমান যুগে বাচ্চা থেকে বয়স্ক সব বয়সের মানুষের হাতে স্মার্টফোন খুব সাধারণ একটি বিষয়। একটি শিশু জন্মানোর পর থেকেই বড় হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের স্মার্ট ডিভাইসের সাথে। বাচ্চাকাচ্চা খেতে না চাইলে অথবা কান্নাকাটি করলেই বাবা মায়েরা হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন স্মার্টফোন। এতে শিশুকাল থেকেই স্মার্ট ডিভাইসের সাথেই অধিকাংশ সময় কাটানোর একটি অভ্যাস গড়ে উঠছে। যা পরবর্তিতে পরিনত হচ্ছে আসক্তিতে। তবে আপনাকে মনে রাখতে হবে স্মার্ট ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহার কখনোই আপনার অথবা আপনার শিশুর জন্য কল্যানকর কিছু নয়। বরঞ্চ এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো দিনকে দিন বাড়তে থাকে। তাই আপনাকে অবশ্যই সময় থাকতে সাবধান হতে হবে।১০. মেডিটেশন এবং যোগব্যায়াম করুন:
নিজেকে সুস্থ রাখতে মেডিটেশন এবং যোগব্যায়ামের উপকারিতা সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না। নিয়মিত মেডিটেশন করলে আমাদের স্নায়ু শিথিল থাকে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে যেকোনো কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে মেডিটেশনের কোনো বিকল্প নেই। অপরদিকে যোগব্যায়াম এমন একটি প্রাকৃতিক উপায় যার মাধ্যমে আপনি দীর্ঘদিন সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন। কারণ যোগব্যায়াম আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সচল এবং কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে এই দুইটি পন্থা নিয়মিত অনুশীলন করুন।পরিশেষ:
এই ছিলো আজকের আর্টিকেল। সুস্থ থাকতে এই ১০টি নিয়ম মেনে চলুন, আশা করছি এর মাধ্যমে আপনি একটি সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবেন।
তবে যেকোনো অসুখ হলে সেটি যতোই সাধারণ হোক না কেনো ডাক্তারের পরামর্শ নিতে দেরী করবেন না।
প্রিয় পাঠক
আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে
ভুলবেন না কিন্তু।
Post a Comment