"চিন্তা
ভাবনা পাল্টান জীবন বদলে যাবে" উক্তিটি শুনে অনেকের
মনে হতে পারে চিন্তা ভাবনার সাথে আবার জীবনের কি সম্পর্ক? তাহলে একটি প্রবাদ বাক্য শুনুন,
"Your life is a reflection of your
thoughts.
If you change your thinking, you change
your life."
অর্থাৎ আপনার
জীবন আপনার চিন্তা ভাবনারই প্রতিফলন। আপনি যদি
আপনার চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন তাহলে আপনার জীবন পরিবর্তন করতে পারবেন। লক্ষ্য করে দেখবেন, যে লোকেরা ক্রমাগত চিন্তা করে যে তারা কতটা গরিব, তাদের জীবন কতটা কষ্টের এবং কঠিন, আদতে তাদের
জীবন সহজে পরিবর্তন হয়না। তারা
প্রতিনিয়ত একই অবস্থায় থাকে অথবা অবস্থা তার চাইতেও বেশি খারাপ হয়। মূলত আপনার জীবনের ভালমন্দ নির্ভর করবে আপনার চিন্তা
ভাবনার উপর।
বর্তমান সময়ে পদার্থবিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী (Stephen Hawking) স্টিফেন হকিং মাত্র ২১ বছর বয়সেই মটর নিউরন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। শুধুমাত্র মস্তিষ্ক এবং হাতের একটি আঙ্গুল নাড়ানো ছাড়া বাকি শরীর তার অবশ হয়ে পড়ে। কিন্তু থেমে থাকেনি তার চিন্তা ভাবনা।
তিনি তার
মস্তিষ্ক এবং চিন্তাভাবনাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়ত মহাবিশ্বের সব অজানা
জিনিসগুলো আবিষ্কার করে পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে যাচ্ছেন। এবার একটু ভেবে দেখুন, স্টিফেন হকিং যদি তার অক্ষমতাকে
গুরুত্ব দিয়ে সেই অবস্থানেই পড়ে থাকতেন, তাহলে আজকের
দিনে আমরা এই বিখ্যাত বিজ্ঞানীর সব অভাবনীয় আবিষ্কার থেকে বঞ্চিত হতাম।
আমরা বেশিরভাগ মানুষ জীবনে সফল হওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু চিন্তা করি। যেমনঃ এত কম বয়সে সফল হওয়া যাবে না অথবা বেশি বয়সে সফল হওয়া অসম্ভব। তাহলে আপনাদের জানিয়ে রাখি বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম ওয়ার্ডপ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা (Matt Mullenweg) ম্যাট মুলেনওয়েগ এর কথা। তিনি মাত্র বিশ বছর বয়সে ওয়ার্ডপ্রেসকে শীর্ষস্থানীয় ব্লগিং প্ল্যাটফর্মে পরিনত করেছেন। সফলতাকে ছুঁতে তার কম বয়স কোন ধরনের বাধা সৃষ্টি করেনি। তার বর্তমান net worth প্রায় ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কে ভেবেছিলো কলেজ ড্রপআউট ছেলেটি একসময় পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিবে।
এছাড়া
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা (Mark Zuckerberg) মার্ক জাকারবার্গের কথা তো সবাই জানেন। মাত্র ১৯
বছর বয়সে তিনি বর্তমানের সবচাইতে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক
প্রতিষ্ঠা করেন। এবং এর কিছু
বছর পরই মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি সফলতা শিখরে পৌঁছে যান। অক্টোবর, ২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী তার বর্তমান সম্পত্তির
নেট ওরথ(net worth) ৯২.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার(তথ্যসূত্রঃ ফোর্বস "Forbes")। তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এই বিখ্যাত ব্যক্তিরা তাদের
জীবনকে পরিবর্তন করেছেন তাদের চিন্তা ভাবনা দিয়েই।
এবার বলবো
এমন একজন বিখ্যাত ব্যক্তির কথা যিনি সফলতা অর্জনের জন্য কখনো বয়সের কথা চিন্তা
করেননি। কেএফসির প্রতিষ্ঠাতা (Colonel Harland Sanders) কর্নেল হারল্যান্ড স্যান্ডার্স তার জীবনের ৬৫ বছর বয়সে এসে নতুন করে
ভাবতে শুরু করেন। জীবনের
প্রতিটি মুহূর্তে চরম বাস্তবতার শিকার এই সফল ব্যক্তিটি চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে
প্রচন্ডভাবে হতাশ হয়ে পড়েন। এমনকি সেই
সময়টিতে তিনি আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। তবে তিনি তার জীবনকে আরো একটিবার সুযোগ দেওয়ার কথা
চিন্তা করেন। কর্নেল হারল্যান্ড এর ৬৬ বছর বয়সে শুরু করা কেন্টাকি
ফ্রায়েড চিকেন যা বর্তমানে কেএফসি নামে পরিচিত। এরপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। কারণ ৮৮ বছর বয়সে
তিনি বিলিয়নিয়ারদের তালিকায় নিজের নাম লিখান।
আমাদের দেশের
প্রেক্ষাপটে, বয়স
৪০ পেরুতে না পেরুতেই নতুন কিছু শুরু করার সাহস, আত্মবিশ্বাস
অথবা চিন্তা ভাবনা কোনটাই আর অবশিষ্ট থাকেনা। এই বয়সের অধিকাংশ লোকের চিন্তা ভাবনাতেই বার্ধক্য চলে
আসে। মনে রাখবেন আপনি যত বেশি পজিটিভ চিন্তাভাবনা
করবেন জীবনে সফল হওয়ার সম্ভাবনা আপনার ততটাই বেড়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক
বাতির আবিস্কারক (Thomas Alva Edison) থমাস আলভা এডিসন ছোটবেলায় ছিলেন চরম দুষ্ট এবং
পড়ালেখায় অমনোযোগী। স্কুল থেকে প্রায় দিনই তার মায়ের কাছে অভিযোগ আসতো সে
ঠিকমতো পড়াশোনা করছে না। একবার এক পরীক্ষায় খারাপ ফলাফলের পর শিক্ষকরা তার
মায়ের কাছে একটি চিঠি পাঠালো। থমাস এডিসন
সেই চিঠিটি এনে তার মায়ের কাছে দেওয়ার পর তার মা হাসিমুখে চিঠিটা পড়তে লাগলেন। এবং থমাসকেও পড়ে শোনালেন চিঠিতে কি লিখা আছে। তিনি থমাসকে বললেন তার শিক্ষকরা চিঠিতে লিখেছে, "আপনার পুত্র অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। কিন্তু আমাদের স্কুলটি অনেক ছোট এবং এখানে আপনার মেধাবী
পুত্রের জন্য উপযুক্ত শিক্ষক নেই। দয়া করে আপনি আপনার পুত্রের শিক্ষার ব্যবস্থা
কোন ভালো স্কুলে করুন।"
চিঠির
কথাগুলো শুনে আলভা এডিসনের মনে দারুন নাড়া দিল। তখন থেকেই তিনি ভাবতে লাগলেন
নিশ্চয়ই তার মধ্যে বিশেষ কিছু গুণ রয়েছে, যার কারণে তার শিক্ষকরা তাকে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র
হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এরপর থেকে দেখা যায়, তার বই পড়ার
প্রতি প্রচন্ড পরিমানে আগ্রহ বেড়ে গেছে। তিনি তার মায়ের অনুপ্রেরণায় আরো বেশি পড়াশোনা করে
নিজেকে মেধাবী করে তুললেন। অতঃপর একটা সময়ে সফলতার শিখরে পৌঁছে তিনি একদিন আবার
সে চিঠিটি খুঁজে পান। যেই চিঠিটি
ছোটবেলায় স্কুলের শিক্ষকরা তার মায়ের কাছে পাঠিয়েছিলো। তিনি মহা আনন্দ নিয়ে সেই চিঠিটি আবার খুলে পড়া শুরু
করেন। কিন্তু এবার চিঠির লেখা গুলো পড়ে তিনি একটু অবাকই হলেন। কারণ চিঠিতে লিখা ছিলো, "আপনার সন্তানটি পড়ালেখা
প্রচন্ড অমনোযোগী এবং স্থূলবুদ্ধি সম্পন্ন। সে কোনভাবেই আমাদের স্কুলের জন্য
উপযুক্ত নয়। তাই আপনার সন্তানকে আমাদের স্কুল থেকে আমরা বহিষ্কার করতে বাধ্য হলাম।"
থমাস এডিশন এই চিঠিটি পড়ে বুঝতে পারলেন তিনি আজ যে অবস্থানে আছেন সেটি শুধুমাত্র তার মায়ের অনুপ্রেরণা এবং তার নিজের চিন্তা ভাবনার কারণে। সে সময় তিনি নিজেকে বিশ্বাস করেছিলেন বলেই পরবর্তীতে সফলতা অবস্থানটি অর্জন করতে পেরেছিলেন। তবে সেদিন যদি তার মা চিঠিতে লেখা সত্য কথাগুলো থমাস এডিশন কে জানিয়ে দিতেন, তাহলে আজকের এই মহামূল্যবান বিজ্ঞানীকে আমরা হয়তো পৃথিবীর ইতিহাসে পেতাম না।
পরিশেষ
মনে রাখবেন, আপনার চিন্তা ভাবনা আপনার
জীবন পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট। তবে জীবনের
প্রতি আপনি কেমন চিন্তাভাবনা রাখছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি আপনার মনকে
যথেষ্ট পরিমান ইতিবাচক চিন্তাভাবনা দিয়ে পরিপূর্ণ করতে পারেন তবে জীবন আপনাকে
একটি সুন্দর অবস্থান উপহার দিবে। এবং
নেতিবাচক চিন্তার ফলাফল সবসময় আমাদের জীবনে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে থাকে।
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লাগলো? কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।
Post a Comment