একজন আমেরিকান ফিলোসোফার এবং সাইকোলজিস্ট উইলিয়াম জেমস (William James) বলেছেন,
"Man can change his life simply by changing his attitude."
অর্থাৎ মানুষ
তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মাধ্যমে খুব সহজেই তার জীবনকে পরিবর্তন করতে পারে। ধরুন আপনার সামনে অর্ধেক পানিপূর্ণ একটি গ্লাস রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি গ্লাসটিকে কিভাবে দেখছেন? কিছু মানুষকে জিজ্ঞেস
করলে তারা বলবে গ্লাসটি অর্ধেক খালি, আবার কিছু মানুষ
বলবে অর্ধেক পূর্ণ। জীবনের
প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও একই রকম। কিছু মানুষ
তার জীবনের প্রাপ্তির অংশটুকুকে বড় করে দেখেন আবার অনেকেই শুধু দেখেন, জীবনে তিনি কি কি পেলেন
না।
যেহেতু
পৃথিবীতে প্রত্যেকটি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা তাই যেকোনো ক্ষেত্রে তাদের মতামত
ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। বেশিরভাগ
সময় দেখা যায়, আমরা
আমাদের জীবনের না পাওয়া জিনিসগুলোর ওপর এত বেশি মনোনিবেশ করে ফেলি যে, আমরা যা পেয়েছি সেই জিনিসগুলোর কোনো গুরুত্ব থাকেনা। তখন আমরা আমাদের জীবনকে সব সময় অপরিপূর্ণ হিসেবে দেখতে
পাই।
অথচ আপনি যদি
আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে ইতিবাচক দিকগুলোর উপর বেশি গুরুত্বারোপ করেন, তাহলে দেখবেন আপনার
জীবনটি পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। পৃথিবীতে সফল ব্যক্তিদের জীবনী ঘাটাঘাটি করলে দেখবেন
তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য অন্যান্যদের তুলনায় এগিয়ে গিয়েছেন।
তবে সফলতার
ব্যাপারটিকেও আমরা অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পরিমাপ করি। যেমন ছোটবেলা থেকেই আমরা বাবা-মায়ের কাছে থেকে শুনে
বড় হই পাশের বাসার বাচ্চাটি সবদিক থেকেই আমাদের চেয়ে বেশি ভালো। হোক সেটা পড়ালেখা, খেলাধুলা অথবা এক্ট্রাকারিকুলাম এক্টিভিসে। আর যদি সে হয় স্কুলের ফার্স্ট বয় অথবা গার্ল তাহলে তো
কথাই নেই। আমাদের এক জীবন চলে যায় এই মেধাবী বাচ্চা
গুলোর সাথে নিজের তুলনা শুনতে শুনতে। এমন নয় যে আপনার মাঝে কোন ধরনের প্রতিভাই
নেই। দেখা যাবে, আপনার মাঝে হয়তো আরো বেশি সম্ভাবনা
রয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সেগুলো
আর কোন ধরনের গুরুত্ব বহন করে না। এমনকি একটা সময় আপনি নিজেও সে গুন গুলোকে আর
গুরুত্ব দেবেন না।
বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের (Albert Einstein) জীবনী লক্ষ্য করলে দেখবেন, একটি লম্বা সময় তিনি তার জীবনে শুধুমাত্র স্ট্রাগল করে গেছেন। তার বাবা-মা এমনকি তার প্রিয়তমা স্ত্রী এবং সন্তানেরাও তার প্রতি কোন ধরনের আস্থা অথবা ভরসা রাখেননি যে তিমি একটা সময় সফল হবেন। তবে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন কিন্তু অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নিজের জীবনের সফলতাকে পরিমাপ করেননি। তিনি তার লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি সফল হয়েছেন। এমনকি তিনি তার জীবনে বারবার ব্যর্থ হওয়ার পরও নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাননি। প্রতিটি ব্যর্থতাকে তিনি সফলতার পথের সিঁড়ি হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। যার ফলস্বরূপ আজ তিনি পৃথিবীর ইতিহাসের একজন নামকরা বিজ্ঞানী।
আরেকজন
বিখ্যাত ব্যক্তির কথা বলব যার নাম নিক ভুইয়িচিচ (Nick Vujicic). তিনি জন্মেছিলেন
টেট্রা-অ্যামেলিয়া নামক একটি দুরারোগ্য ব্যাধি নিয়ে। যার জন্য তার দেহের দুটি মুল্যবান অঙ্গ হাত এবং পা
ছাড়াই তাকে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তবে তিনি
তার জীবনে একমুহূর্তের জন্যও হেরে যাননি। ৩৭ বছর বয়সি নিক ভুইয়িচিচ একজন জনপ্রিয় মোটিভেশনাল স্পিকার, অভিজ্ঞ সাতারু এবং
স্কাই-ডাইভার। এমনকি তার
পরিবারে একজন প্রিয়তমা স্ত্রী এবং চারটি সন্তান রয়েছে।
এবার একটু
ভেবে দেখুন, জীবন
তাকে কতটুকু দিয়েছে এবং তিনি সেটাকে কতটুকু কাজে লাগিয়েছেন। শুরুতেই যদি তিনি নিজের এবং তার চারপাশের পরিবেশের উপর
নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতেন তবে আজ তিনি কোনদিনও এই অবস্থানে পৌঁছাতে পারতেন না। পৃথিবীতে এমন মানুষের অভাব নেই যাদের জীবনে অনেক কিছু
থাকার পরও তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে জীবন পার করে দেন। অনেকেই আবার আত্মহত্যার মতো
ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
অথচ নিক ভুইয়িচিচ তার অর্ধেক শরীর নিয়েই এমন অনেক মানুষকে ক্রমাগত অনুপ্রেরণা জুগিয়ে
যাচ্ছেন। তার মোটিভেশনাল কথাবার্তার জোরে অনেকেই নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করছেন। যার ফলস্বরূপ নিজেদের জীবন পরিবর্তন করতেও সক্ষম হচ্ছেন।
একজন রাজা
এবং কৃষকের গল্প বলি,
একজন কৃষকের
ছোট্ট একটি জমি ছিল। যেখানে তিনি
প্রতিদিন চাষাবাদ করতেন এবং যে ফসল হতো তা দিয়ে তার পুরো পরিবারের কোনমতে দিন
চলতো। তবে এতে কৃষকের তেমন কোন আক্ষেপ ছিল না। বরং সে তার ছোট্ট সংসারে খুব সুখেই দিনযাপন করছিলেন। কৃষকের ছোট্ট কুড়ঘরের কাছেই ছিলো একটি রাজপ্রাসাদ। রাজার প্রচুর ধনসম্পদ থাকার পরেও তিনি তার জীবনে সুখী
ছিলেন না। তিনি প্রতিদিন তার রাজমহলের বারান্দা থেকে
কৃষককে দেখতেন আনন্দ নিয়ে ক্ষেতে কাজ করতে এবং তার ছোট্ট ছেলেটার সাথে খেলাধুলা
করতে। রাজা প্রায় সময় অবাক হয়ে ভাবতেন এত অভাবের পরও কৃষক কিভাবে এত সুখে থাকে।
আর তার রাজকোষ ভরা সম্পদ থাকার পরও তিনি কেন সুখী নন।
একদিন তিনি
গোপনে কৃষকের জমিতে একটি স্বর্ণমুদ্রা ভরা কলস রেখে চলে আসলেন। পরদিন কৃষক
চাষাবাদের জন্য জমিতে যেয়েই কলসটি খুঁজে পান এবং তা বাড়িতে নিয়ে আসেন। বাড়িতে
নিয়ে এসে দেখেন কলসটিতে নিরানব্বইটি স্বর্ণমুদ্রা রয়েছে। তার কাছে মনে হতে থাকে
কলসটিতে একশোটি স্বর্ণমুদ্রা ছিলো, কিন্তু একটি স্বর্ণমুদ্রা কোনক্রমে তিনি হারিয়ে
ফেলেছেন। তিনি সে একটি স্বর্ণমুদ্রা পরিপূর্ণ করতে
আরো বেশি কাজ করা শুরু করে দেন। এবং প্রতিনিয়ত তার এই চাহিদা বাড়তেই থাকে। কিছুদিন পর রাজা লক্ষ্য করেন কৃষকটি আর হাসিখুশি ভাবে
কাজ করছেনা, তার
বাচ্চাটির সাথে খেলছে না এমনকি পরিবারকেও সময় দিচ্ছে না। অর্থাৎ কৃষকটি আর আগের
মতো সুখি নেই।
অথচ কৃষকটি তার আগের অবস্থায় অনেক বেশি সুখী ছিলেন যা তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলে গেছে। অতঃপর রাজাটি বুঝতে পারলেন তাঁর এতো সম্পদ থাকার পরেও তিনি কেন সুখী থাকতে পারছিলেন না। কারন তার জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো আরো বেশি উপার্জন।
পরিশেষ
-Mr.
Positivity Inclined, Ervin Welsh বলেন, "জীবন পরিবর্তনের
সবচেয়ে সস্তা পথটি হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো।" অর্থাৎ দৃষ্টিভঙ্গি বদলান জীবন বদলে যাবে। জীবনের
কাছ থেকে আপনি কি চাচ্ছেন সেটিই সবচেয়ে বড় কথা। অন্যকে আপনার জীবনে সফলতার
পরিমাপ করতে কখনোই দেবেন না। তাহলে দেখবেন আপনি সুখী হতে পারছেন নিজের ইতিবাচক
দৃষ্টিভঙ্গি এবং যোগ্যতার বলে।
প্রিয় পাঠক আজকে আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লাগলো কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে ভুলবেন না।
Post a Comment