এমন ১০টি অভ্যাস যা আপনাকে কখনো ধনী হতে দেবে না - Warren Buffett - Bangla Motivational Video

বিখ্যাত লেখক এবং মোটিভেশনাল স্পিকার T. Harv Eker বলেন, "আপনি আমাকে আপনার পাঁচ মিনিট সময় দিন। আমি গণনা করে বলে দিতে পারবো আপনার বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা কি এবং ভবিষ্যতে আপনি ধনী হতে পারবেন কিনা।"

কথাটি এতটা আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারছেন কারণ বহুবছর ধরে তিনি বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের সাইকোলজি, মাইন্ডসেট, লাইফস্টাইল এবং অভ্যাস নিয়ে গবেষনা করে এসেছেন। তাহলে বলা যেতে পারে দৈনন্দিন জীবনের কিছু অভ্যাস আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলে। 

আজকে আলোচনা করবো এমন দশটি অভ্যাস নিয়ে যা আপনাকে ধনী হতে দেবে না। চলুন শুরু করা যাক...

ধনী না হওয়ার ১০টি কারন:


১. ধনী হবার শর্টকাট পথ খোঁজা: 

বেশিরভাগ মানুষই অল্প সময়ে এবং কম পরিশ্রম করেই ধনী হতে চান। তার জন্য অনেক ধরনের শর্টকাট পথও খুঁজে বের করেন, যেমনঃ বাজি ধরা, জুয়া খেলা, লটারি ইত্যাদি। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি বছর প্রায় ৯৪% ভাগ লোকই লটারি কিনে থাকেন এই আশায় যে তারা এক সুযোগেই ধনী হয়ে যাবেন। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আপনার যদি এই অভ্যাসটি থেকে থাকে তবে আপনার ধনী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। 

২. অস্বাস্থ্যকর ডায়েট: 

আমরা যখন ধনী হওয়ার চেষ্টায় কর্মক্ষেত্রে কাজের প্রতি বেশি  মগ্ন থাকি তখন নিজেদের যত্ন নেবার কথা ভুলেই যাই। আমাদের খাওয়া দাওয়ায় প্রচুর অনিয়ম হতে থাকে। একটা পর্যায়ে আমরা অস্বাস্থ্যকর ডায়েটও ফলো করা শুরু করে দেই। যার ফলস্বরূপ দেখা যায় আমরা শারীরিকভাবে একটানা বেশিদিন সুস্থ থাকতে পারিনা। নিজের শরীরের সঠিক যত্ন নেওয়ার অভ্যাস না থাকলে আপনি কোনদিনও ধনী হতে পারবেন না। 

৩. টক্সিক রিলেশন: 

সাধারণত আমাদের সম্পর্কের খুব কাছের ব্যক্তিটির আমাদের প্রতি তিক্ত মনোভাবকে টক্সিক রিলেশন অথবা বিষাক্ত সম্পর্ক বলে। টক্সিক রিলেশনগুলো আমাদের মনোবল নষ্ট করে বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাকেই কমিয়ে দেয়। এই সম্পর্কগুলোর কারণে দেখা যায় আমরা মানসিকভাবে এতটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পরি, যে আমাদের মাঝে আর নতুন কিছু করার উদ্যোগ অথবা আগ্রহ কোনটাই থাকেনা।

৪. অতিরিক্ত ইন্টারনেট আসক্তি: 

বর্তমানে ডিজিটাল যুগের কল্যাণে ইন্টারনেট ব্যবহার করে না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে ইন্টারনেট যেমন আমাদের কঠিন কাজগুলোকে অধিকতর সহজ করে দিয়েছে তেমনি এর ক্ষতিকারক অনেক দিকও রয়েছে। আর তার মাঝে একটি হচ্ছে ইন্টারনেট আসক্তি। দেখা যায় আপনি নিজের অজান্তেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইন্টারনেটে বসে কাটিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি আপনি টের পাচ্ছেন না আপনার কত মূল্যবান সময়গুলো অপ্রয়োজনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

৫. নেতিবাচক মনোভাব: 

আমাদের মাঝে অনেকেই আশেপাশের সবকিছু নিয়েই এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব পোষন করেন। যেমনঃ এই কাজটি আমার দ্বারা হবে না, অথবা আমি কাজের জন্য উপযুক্ত নই অথবা ভাগ্য আমার জন্য সুপ্রসন্ন নয়। এরকম অনেক ধরনের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা আমরা আমাদের নিজেদের মাঝে ধারণ করে রাখি। মনে রাখবেন, এই অভ্যাসটি যদি আপনার মধ্যে থেকে থাকে তাহলে আপনি কখোনোই ধনী হতে পারবেন না।

৬. অলসতা: 

ধনী হতে চাইলে সবার প্রথমে আপনার মধ্য থেকে অলসতাকে দূর করতে হবে। অলসতা আমাদের জীবনে এক ধরনের অভিশাপের মতো। জীবনে সফলতা অর্জন করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সে অনুযায়ী পরিশ্রম করতে হবে। লক্ষ্য করে দেখবেন, আমাদের জীবনে কোনো কিছু অর্জনের ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় বাধাটাই হচ্ছে অলসতা। যদিও অলস ব্যক্তিরা বুদ্ধির দিক দিয়ে বাকি সবার থেকে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকে। তবে অলসতার কারণে তা সঠিকভাবে কাজে লাগানোর অভাবে কোনো কিছু অর্জন করা থেকে তারা পিছিয়ে পড়ে।

৭. অপ্রয়োজনীয় খরচ করা: 

আপনি যদি অপ্রয়োজনে অধিক টাকা পয়সা ব্যয় করে থাকেন তাহলে জেনে রাখুন এই অভ্যাসটি কিন্তু আপনাকে কোনদিনও ধনী হতে দেবে না। ধরুন আপনি মাসে স্যালারি পাচ্ছেন ২৫ হাজার টাকা। সেখান থেকে সংসার খরচ বাবদ ১০,০০০ টাকা আপনি আলাদা করে রেখে দেলেন। বাকি ১৫০০০ টাকা থেকে যদি আপনি সঞ্চয় করার পরিবর্তে বাজে খরচ করে ফেলেন তাহলে দেখবেন মাসের অর্ধেক যেতে না যেতেই আপনার আবার অন্যের কাছে হাত পাতা লাগছে।

৮. রিস্ক না নেওয়া: 

অনেক ধনী ব্যক্তিদের জীবনী ঘাঁটাঘাঁটি করলে জানা যায়, জীবনে তারা সফল হতে কিভাবে রিস্ক নিয়েছিলেন। আপনি যদি কোন কাজে সাহস করে ঝুঁকি নাই নেন, তাহলে কিভাবে সফল হবেন আর কিভাবেই বা ধনী হবেন। যেমন আপনার পরিবার-পরিজন এবং আত্মীয়-স্বজন সকলেই উপার্জনের পথ হিসেবে চাকরিকেই বেছে নিয়েছেন। কিন্তু আপনি আপনার বুদ্ধিমত্তা এবং যোগ্যতা দিয়ে ব্যবসা করার কথা চিন্তা করছেন। আপনার পরিবারে কেউই পূর্বে ব্যবসার কাজে নিয়োজিত ছিল না তাই এটি আপনার জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বলা যায়। তবে আপনি যদি সাহস করে এই কাজটিতে রিস্ক নেন তবে অদূর ভবিষ্যতে আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে।

৯. উপার্জনের মাত্র একটি পথ রাখা: 

ধনী হতে হলে আপনাকে অবশ্যই একের অধিক উপার্জনের পথ রাখতে হবে। আপনি যদি আপনার উপার্জনের একটি পথের উপরেই ভরসা করে বসে থাকেন তাহলে কোনদিনও ধনী হতে পারবেন না। বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের জীবনযাপন থেকে লক্ষ্য করবেন তারা কখনও উপার্জনের একটি খাতের উপর নির্ভর করে বসে থাকে না। তারা উপার্জনের আরো বিকল্প ক্ষেত্র তৈরী করে নেয়।

১০. পরিকল্পনা না করা: 

আপনি জীবনে ধনী হতে চান কিন্তু সে অনুযায়ী কোন ধরনের পরিকল্পনা করেন নি। এবার নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন, কোনো পরিকল্পনা ছাড়া আপনি কি ধনী হতে পারবেন? মনে মনে নিশ্চয়ই উত্তরটি পেয়েও গেছেন। একটি সঠিক পরিকল্পনা না থাকলে যেকোন কিছুই অর্জন করতে আপনি অসফল হবেন। এ অভ্যাসটি যদি পরিবর্তন করার কথা না ভাবেন তাহলে ধনী হওয়ার কথা ভুলেই যান।

পরিশেষ:

Charles A. Jaffe এর ভাষ্যমতে, শুধুমাত্র আপনার উপার্জন আপনাকে ধনী করতে পারে না, এটি নির্ভর করে আপনার ব্যয় করার অভ্যাসের উপর। তাহলে বুঝতেই পারছেন ধনী হতে হলে এই অভ্যাসগুলো ত্যাগ করা আপনার জন্য কতটা জরুরি। 

প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেল থেকে তাহলে আপনারা কি কি শিখলেন? চটজলদি আমাদের কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।

Post a Comment

Previous Post Next Post