পৃথিবীজুড়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মাঝে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক সবচাইতে জনপ্রিয়, যার প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ তার তৈরি ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে ২.৭ বিলিয়নের বেশি। কম বয়সেই সফলতা অর্জনকারী ব্যক্তিদের তালিকা দেখতে গেলে তার নামটিই আসে সবার প্রথমে


সফলতা অর্জন করার জন্য মার্ক জাকারবার্গ তার জীবনে কিছু নিয়ম মেনে চলতেন যার কারণে তিনি তার আজকের অবস্থানটি তৈরি করতে পেরেছেন আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো মার্ক জাকারবার্গের সাফল্যের সেরা ১০ টি নিয়ম

রুলস নাম্বার ১:  সময়কে কাজে লাগান

আপনার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আপনি কি কাজে ব্যয় করছেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মার্ক জাকারবার্গ বলেন, সময়কে সব সময় সঠিক কাজে ব্যবহার করা উচিত। আপনি জীবনে তখনি সফল হবেন যখন আপনার সময়কে কাজে লাগাতে পারবেন। আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা অপ্রয়োজনে অনেক সময় নষ্ট করে ফেলেন। দিন শেষে দেখা যায়, সফল হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকার পরও শুধুমাত্র সময়কে কাজে লাগানোর অভাবে তিনি আর সফল হতে পারছেন না। তাহলে এবার একটু ভেবে দেখুন আপনি আপনার সময়কে কি ধরনের কাজে ব্যবহার করছেন

রুলস নাম্বার ২:  অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিন

মার্ক জাকারবার্গ বলেন আপনি যে কাজ করছেন সে সম্পর্কে অন্যের মতামত গ্রহণ করাটাও খুব জরুরি দেখা গিয়েছে, যে ব্যক্তিরা নিজের কাজ সম্পর্কে একক সিদ্ধান্ত না নিয়ে বাকিদের মতামতকেও গুরুত্ব দেন তারা তুলনামূলক বেশি সফল হয়ে থাকেন। মার্ক জাকারবার্গ তাঁর কোম্পানির বাকি কর্মচারীদের মতামত জানতে একটি সাপ্তাহিক বৈঠক চালু করেন। যেখানে তার কোম্পানির কর্মচারীরা তাকে তার কোম্পানির অগ্রগতি, পরিকল্পনা এবং ভবিষ্যৎ কার্যক্রম সম্পর্কে যেকোনো ধরনের প্রশ্ন করেন এর মাধ্যমে মার্ক জাকারবার্গ তার কর্মচারীদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারেন এবং তাদের মতামত গ্রহণ করতে পারেন

রুলস নাম্বার ৩:  ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন

অনেকেই মনে করেন ভুল করা তার সফলতার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। কিন্তু মার্ক জাকারবার্গ বলেন ভুল করা আপনার সফলতার পথের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিঁড়ি হতে পারে যদি আপনি ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন যেকোনো কাজেই আমরা প্রায়শই ভুল করে থাকি তবে ভুল পদক্ষেপের মাধমেই কিন্তু আমরা বুঝতে পারি পরবর্তী সঠিক পদক্ষেপটি কি হবে। মার্ক জাকারবার্গ সব সময় তার ভুল পদক্ষেপগুলোকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতেন তিনি মনে করেন আমাদের ভুলগুলো থেকে আমরা সঠিক পথটি খুঁজে পেতে পারি

রুলস নাম্বার ৪:  শুধুমাত্র স্বপ্ন দেখাই যথেষ্ট নয়

আমাদের প্রত্যকের জীবনেই কিছু না কিছু স্বপ্ন থাকে যা আমরা পূরণ করতে চাই কিন্তু স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে আপনাকে অবশ্যই সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। মার্ক জাকারবার্গ বলেন শুধু স্বপ্ন দেখাই যথেষ্ট নয় স্বপ্নকে সত্যি করাতে সঠিক পরিশ্রম করাটাও ততটাই জরুরী তবে বেশিরভাগ মানুষের মাঝেই তাদের স্বপ্ন অনুযায়ী কাজ করার প্রবণতা দেখা যায় না। এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে মাত্র ২% লোক তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ করে থাকেন বাকি ৯৮% ব্যক্তিরাই নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ব্যর্থ হন। তাই আপনাকে সেই ২ পার্সেন্ট লোকের মধ্যেই নিজেকে সামিল করতে হবে

রুলস নাম্বার ৫:  নিজেকে কখনো দুর্বল ভাববেন না

মার্ক জাকারবার্গ মনে করেন পৃথিবীতে প্রত্যেকটি মানুষের মাঝেই কিছু-না-কিছু প্রতিভা রয়েছে এবং প্রত্যেকেই সফলতা অর্জন করার যোগ্যতা রাখে তবে আপনার মাঝে কোন যোগ্যতাটি আছে সেটি আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে নিজেকে কখনো দুর্বল মনে করা যাবে না। সাধারণত, আমরা সফল ব্যক্তিদের দেখলে ভাবি তাদের মাঝে নিশ্চয়ই বাড়তি কোনো প্রতিভা আছে যা আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু এই ধারনাটি সম্পুর্ন ভুল। মার্ক জাকারবার্গ বিশ্বাস করেন, মানুষ চাইলেই যে কোনো কিছু অর্জন করতে পারে তবে সেটি তার চেষ্টা, পরিশ্রম এবং মেধার জোড়ে‌। তাই নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বজায় রাখাটা খুব জরুরী।

রুলস নাম্বার ৬:  জীবনের সবচাইতে বড় রিস্ক হচ্ছে কোন ধরনের রিস্ক না নেওয়া

আপনি যদি কোন কাজে কখনোই কোন ধরনের রিস্ক না নেন তবে আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আমরা সবসময় চাই একটি নিশ্চিন্ত জীবন যাপন করতে তাই কোন কিছুতে বড় ধরনের রিস্ক নিতে আমরা কমবেশি সকলেই ভয় পাই। তবে মার্ক জাকারবার্গ বলেন, আপনি যদি জীবনে কোনো রিস্কই না নেন তাহলে সফলতা অর্জন করাটা আপনার জন্য খুব বেশি কঠিন হয়ে যাবে পৃথিবীর প্রত্যেকটি সফল ব্যক্তি তাদের জীবনে কোন না কোন সময় রিস্ক নিয়েছিলেন তাই আজকে তারা সফলতা অর্জন করতে পারেছেন

রুলস নাম্বার ৭:  আপনার আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে শিখুন

মার্ক জাকারবার্গ এর মতে সেই ব্যক্তি সবচাইতে বেশি বুদ্ধিমান যে তার প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছ থেকেও শিখে একজন সফল ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করলে দেখবেন তারা তাদের জীবনে সবার কাছ থেকেই কিছু না কিছু শিখেছেন এবং পরবর্তীতে সেগুলোকে নিজের জীবনে কাজে লাগিয়েছেন যতোটা সম্ভব নিজের আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে শিখার চেষ্টা করুন বিশেষ করে যারা পরিশ্রমী এবং বুদ্ধিমান তাদেরকে দেখে অনেক কিছুই শেখার আছে মনে রাখবেন, জীবনে সফল হতে গেলে শিখার কোনো বিকল্প নেই।

রুলস নাম্বার ৮:  সর্বোচ্চ সেবাটি প্রদান করুন

আপনার পণ্য অথবা সেবাটি গ্রাহকের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফেসবুক তৈরি করার পর থেকে মার্ক জাকারবার্গ এবং তার দলের মূল উদ্দেশ্যটিই ছিলো ব্যবহারকারীদের মাঝে সর্বোচ্চ সেবাটি পৌঁছে দেওয়া আপনি যত ভাল সেবা প্রদান করতে পারবেন আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা ঠিক ততটাই বেড়ে যাবে। শুরুর দিকে অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস লোকজনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানের পণ্য এবং সেবা পৌঁছে দিয়ে আসতেন আর তাদের আজকের অবস্থান নতুন করে কাউকে বলে দিতে হবে না।

রুলস নাম্বার ৯:  একটি ভালো দল তৈরি করুন

মার্ক জাকারবার্গ মনে করেন এককভাবে সফল হওয়াটা অনেকটা কষ্টকর আপনাকে সফল হতে হলে অবশ্যই একটি ভালো দল তৈরি করে নিতে হবে টিম ওয়ার্ক যেকোনো ক্ষেত্রে সফল হওয়ার সম্ভাবনাকে অনেক গুন বাড়িয়ে দেয় মার্ক জাকারবার্গ প্রতিদিন অন্তত তিন ঘণ্টা তার দলের সাথে সময় কাটান এবং তিনি তার পুরো সময়ের ২৫ ভাগ ব্যয় করতেন তার দলের জন্য ভালো এবং যোগ্য সদস্য খুঁজতে

রুলস নাম্বার ১০:  নিজের সেরাটা দিন

নিজেকে একজন সফল ব্যক্তি হিসেবে দেখতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে নিজের সেরাটি দিতে হবে মার্ক জাকারবার্গ বলেন আপনি যখন আপনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা এবং পরিশ্রম দিয়ে কোনো কিছু অর্জন করার চেষ্টা করবেন তখন আর আপনাকে ফিরে তাকাতে হবে না। মনে রাখবেন আপনি যখন নিজের সেরাটা দিবেন, বিনিময়ে তার আশানুরূপ ফলাফল পাবেন

পরিশেষ

এই ছিল মার্ক জাকারবার্গের সাফল্যের সেরা ১০টি নিয়ম, যা অনুসরণ করে তিনি জীবনে সফলতা অর্জন করেছেন। সফল হতে চাইলে আপনিও আপনার জীবনে এই নিয়মগুলো মেনে দেখতে পারেন আশা করি এই নিয়মগুলো আপনার উপকারেই আসবে

প্রিয় পাঠক আর্টিকেলটি কেমন লাগলো আমাদের কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে ভুলবেন না।

Post a Comment

Previous Post Next Post